আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প সম্প্রতি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। ট্রুথসোসিয়ালে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি জানান, তার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র তার পারমাণবিক অস্ত্রাগারকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী করেছে। রাশিয়া ও চীনের চলমান পারমাণবিক কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত অনিবার্য ছিল বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন।
এই ঘোষণার পাশাপাশি ট্রাম্প চীন থেকে কৃষি পণ্য ক্রয়ের একটি নতুন চুক্তি অনুমোদন করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ পদক্ষেপ এবং চীনের সঙ্গে ‘নিয়ন্ত্রিত নির্ভরশীলতা’ বজায় রাখার ইঙ্গিত দেয়। তবে, পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরুর সিদ্ধান্ত বিশ্ব নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা সতর্ক করেছেন যে এটি রাশিয়া ও চীনকে অনুরূপ পরীক্ষা চালানোর বৈধতা দিতে পারে এবং সম্ভাব্যভাবে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্ম দিতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার সফল ‘পসেইডন’ পারমাণবিক ডুবোযানের পরীক্ষাটিও এই উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্ব এখন এক নতুন “স্নায়ু-শান্তি” (cold peace) যুগে প্রবেশ করছে, যা প্রকাশ্য সংঘাতবিহীন হলেও কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সামরিক প্রতিরোধ দ্বারা সংজ্ঞায়িত।
ইউক্রেনীয় সামরিক বিশেষজ্ঞ ভাদিম ট্রিউখান ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে তার হতাশার বহিঃপ্রকাশ এবং শক্তি প্রদর্শনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এর মাধ্যমে ট্রাম্প পুতিন ও শি জিনপিংকে বার্তা দিতে চান যে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মঞ্চে সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবে থাকবে। ট্রিউখান মনে করেন, এই পদক্ষেপ ন্যাটো এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন জোটকে আরও শক্তিশালী করবে, কারণ মিত্ররা ওয়াশিংটনের ভূ-রাজনৈতিক খেলায় ফিরে আসাকে ইতিবাচকভাবে দেখবে।
তবে ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীল ওয়াটসন ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি যুক্তি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরীক্ষা দীর্ঘস্থায়ী পরীক্ষা-নিষেধাজ্ঞা ভেঙে দিতে পারে, যা রাশিয়া, চীন এবং উদীয়মান পারমাণবিক শক্তিগুলোকে তাদের নিজস্ব পরীক্ষা চালানোর অজুহাত দেবে। ওয়াটসন সতর্ক করেন যে এটি ব্যাপক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (CTBT)-এর কার্যকারিতা বিনষ্ট করবে এবং স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ যুগের সমাপ্তি ঘটাতে পারে, যা পারস্পরিক নিশ্চিত ধ্বংসের (MAD) যুগে ফিরে আসার ঝুঁকি তৈরি করবে।
মার্কিন জোটের জন্য এর প্রভাব জটিল। ন্যাটোর মিত্ররা হয়তো গোপনে এই প্রতিরোধ সংকেতকে স্বাগত জানাবে, কিন্তু প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে। অন্যদিকে, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারদের জন্য এটি এক গুরুতর নৈতিক দ্বিধা তৈরি করবে, কারণ তারা একদিকে মার্কিন পারমাণবিক ছাতার উপর নির্ভরশীল, অন্যদিকে তাদের অভ্যন্তরে পারমাণবিক-বিরোধী মনোভাব বিদ্যমান। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কেবল মার্কিন প্রতিরক্ষা নীতির পরিবর্তন নয়, এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক ও কূটনৈতিক মোড়, যা বিশ্বকে এক নতুন স্নায়ু-শান্তির যুগে ঠেলে দিচ্ছে যেখানে ক্ষমতা প্রদর্শনই স্থিতিশীলতার মূল ভাষা হয়ে উঠছে।










