Home সারাদেশ বাবাকে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা, ছেলে গ্রেপ্তার

বাবাকে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা, ছেলে গ্রেপ্তার

জামিউল হক খান জিসান
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল: বাবা-মায়ের ভাঙা সংসার মেনে নিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নিজের বাবাকেই হত্যার পথ বেছে নিলেন ছেলে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে কলেজ শিক্ষার্থী জামিউল হক খান জিসান (২৩) ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবাকে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

নিহত রাশিদুল হক খান সুমন (৪৭) পেশায় ছিলেন ফার্মেসির ব্যবসায়ী। তিনি উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার রাতে নিহতের বাবা মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক খান (৮২) থানায় মামলা দায়ের করেন।

পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে মর্মান্তিক পরিণতি

এক বছর আগে সুমনের স্ত্রী জুলিয়া খানমের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। এতে ভেঙে পড়ে ছেলে জিসান। মাকে আগের মতো সংসারে ফিরিয়ে আনার জন্য বাবাকে বারবার অনুরোধ করলেও রাজি হননি সুমন। এ নিয়ে কয়েক দফা তর্ক-বিতর্কের পর বাবার হাতে মারধরের শিকার হন জিসান।

পুলিশ জানায়, ক্ষোভ থেকেই জিসান বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। আগে থেকেই বাড়ির পাশে গোপনে একটি গর্ত খুঁড়ে রাখেন লাশ গুমের জন্য। ফার্মেসি থেকে নিয়ে আসেন ঘুমের ট্যাবলেট।

হত্যার রাত

গত ২০ আগস্ট রাতে একই ঘরে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে ২০টি ঘুমের ট্যাবলেট গলিয়ে রাখেন জিসান। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুমন গ্যাসের ওষুধ চান। সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেই মিশ্রিত পানি বাবাকে খাওয়ান তিনি। কিছুক্ষণ পরেই গভীর ঘুমে চলে যান সুমন। আর সেখানেই থেমে যায় তার জীবন।

পরদিন দুপুরেও সুমন না জাগলে প্রতিবেশীরা তাকে মৃত অবস্থায় পান। সবাই ভেবেছিলেন স্বাভাবিক মৃত্যু। দাফনও সম্পন্ন হয়।

প্রকাশ পেল সত্য

এরপর থেকেই জিসানের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে দাদা নুরুল হক খান তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রথমে গোপন করলেও শেষ পর্যন্ত হত্যার কথা স্বীকার করে ফেলে জিসান। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

ঘাটাইল থানার ওসি মীর মোশাররফ বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিসান বাবাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।”

স্থানীয়দের ভাষ্য—বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের জেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন জিসান। সেই ক্ষোভ ও হতাশাই তাকে এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

👉 এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারকেই নয়, গোটা এলাকা জুড়েই নেমে এসেছে শোক ও হতবাক প্রতিক্রিয়া।