হেলথ ডেস্ক: পিঠ বা কোমরের ব্যথায় ভোগেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বজুড়ে কর্মক্ষমতা হারানোর অন্যতম প্রধান কারণ এই পিঠের ব্যথা। দামি আর্গোনমিক চেয়ার, মাসাজ, ফিজিওথেরাপি কিংবা ব্যথানাশক মলম সব চেষ্টা করেও অনেকে দীর্ঘস্থায়ী স্বস্তি পান না। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে এক চমকপ্রদ তথ্য; আপনার পিঠের ব্যথার শেকড় হয়তো লুকিয়ে আছে আপনার মেরুদণ্ডে নয়, বরং আপনার পেটে বা অন্ত্রে (Gut)।
গাট-স্পাইন অ্যাক্সিস: নতুন দিগন্ত
বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্ক ও অন্ত্রের সংযোগের বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন। তবে এখন গবেষকরা ‘গাট-স্পাইন অ্যাক্সিস’ (Gut-Spine Axis) বা অন্ত্র-মেরুদণ্ড সংযোগ নিয়ে কথা বলছেন। কিংস কলেজ লন্ডনের নিউরোসায়েন্টিস্ট ফ্রান্সেসকা দেঙ্ক জানান, আমাদের অন্ত্রের কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া বা মাইক্রোবায়োম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং ব্যথার অনুভূতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অন্ত্রের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ মেরুদণ্ডের ক্ষয় ত্বরান্বিত করতে পারে।
পেটের সমস্যা কীভাবে পিঠের ব্যথা বাড়ায়?
ডা. গিল জেনকিন্স নামক একজন জিপি ও ব্যাক পেইন বিশেষজ্ঞ জানান, অন্ত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বা ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতা শরীরের স্নায়ু ও পেশীগুলোকে অতি সংবেদনশীল করে তোলে, যা পিঠের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়।
মূলত ভুল খাদ্যাভ্যাস বা মানসিক চাপের কারণে অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বেড়ে গেলে ‘লিকি গাট’ (leaky gut) বা অন্ত্রের ছিদ্র দিয়ে ক্ষতিকর উপাদান রক্তে মিশে যায়। এটি শরীরে এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (Inflammation) সৃষ্টি করে, যা মেরুদণ্ডের ডিস্ক ও জয়েন্টের ক্ষতি করে। এছাড়া আইবিএস (IBS) এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাগুলো পেটের পেশীতে চাপ সৃষ্টি করে, যার রেশ ছড়িয়ে পড়ে কোমরে বা পিঠে।
খাবারে পরিবর্তন: ব্যথা কমানোর উপায়
পুষ্টিবিদ ইয়েঙ্কা টমাস জানান, শরীর ও পিঠের প্রদাহ কমাতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি।
১. বর্জন করতে হবে: চিনিযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার (আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড), ভাজাপোড়া এবং লাল মাংস। এসব খাবার শরীরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়। অ্যালকোহল থেকেও দূরে থাকা উচিত।
২. খেতে হবে:
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: সামুদ্রিক মাছ (যেমন- স্যামন, সার্ডিন), আখরোট এবং চিয়া সিড শরীরের প্রদাহ কমাতে জাদুর মতো কাজ করে। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন তৈলাক্ত মাছ খাওয়া উচিত।
রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ: অন্ত্রের উপকারি ব্যাকটেরিয়ার জন্য আঁশজাতীয় খাবার খুব জরুরি। ভাত, আলু বা পাস্তা রান্না করে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করলে তাতে ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’ তৈরি হয়। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। পরে গরম করে খেলেও এর গুণাগুণ নষ্ট হয় না।
ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েট: শাকসবজি, শস্যদানা এবং মাছ সমৃদ্ধ খাবার পেশী রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়।
পিঠ ও পেট ভালো রাখার আরও কিছু টিপস
সচল থাকুন: ব্যথা থাকলেও অল্প হাঁটাচলা করুন। সপ্তাহে ৩-৫ দিন হাঁটলে পিঠের ব্যথা ফিরে আসার ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়।
পেইনকিলারে সতর্কতা: দীর্ঘমেয়াদে আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক অন্ত্রের ক্ষতি করে এবং আলসার তৈরি করতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি ও ভিটামিন ডি: অন্ত্র সুস্থ থাকলে শরীর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি শোষণ করতে পারে, যা হাড়ের জন্য জরুরি। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পানি পান করুন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: মানসিক চাপ কমাতে ‘বক্স ব্রিদিং’ (চার সেকেন্ড শ্বাস নেওয়া, চার সেকেন্ড ধরে রাখা, চার সেকেন্ডে ছাড়া) অনুশীলন করুন। স্ট্রেস পেটের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
- বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যদি কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেলে পেটে অস্বস্তি হয়, তবে তা এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন, পেট ভালো থাকলে আপনার মেরুদণ্ডও আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।










