বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, হাতিয়া: নোয়াখালীর উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় একটি পুকুরে বিশাল আকৃতির কুমির দেখা যাওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ শরীফের বাড়ির পুকুরে কুমিরটির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়তে থাকে।
বুধবার বিকেলে মাসুদের স্ত্রী প্রথম কুমিরটিকে পুকুরে ভেসে উঠতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে স্বজনদের জানান। এরপর খবর দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগকে। দুই সংস্থা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও কুমিরটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের উদ্ধার কাজ সরাসরি তাদের দায়িত্ব নয়, তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
মাসুদ শরীফ জানান, “তিন দিন আগে পাশের দোকানদার ওলি ভাই রান্নাঘরের পাশে কুমির দেখে আমাদের জানান। আমরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাড়াতে গেলে কুমিরের বিশাল আকৃতি দেখে ভয় পেয়ে যাই। এখন রাতে পরিবার নিয়ে পাহারা দিচ্ছি।”
পুকুরটির পাশে জনসমাগম বাড়ছে। অনেকেই কুমিরটির ছবি ও ভিডিও তুলছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুমিরটি বারবার পানির ওপর মাথা ও পিঠ তুলে ভেসে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইমদাদুল হক দাদুল বলেন, “প্রথমে মনে হয়েছিল গুজব। পরে নিজের চোখে দেখে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যাই। এটা সত্যিই বড় কুমির। এখন আমরা শিশুদের পুকুরের ধারে যেতে দিচ্ছি না।”
এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, “কেউ বলছেন এটা কুমির, কেউ বলছেন কুমির সদৃশ কিছু। আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।”
উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু ইউসুফ জানান, “একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। দ্বীপ এলাকা হওয়ায় পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগছে। উদ্ধার হলে আশা করি মানুষের আতঙ্ক কমবে।”
তবে কুমিরটি কীভাবে পুকুরে ঢুকেছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। স্থানীয়দের ধারণা, এটি আশপাশের নদী বা খাল থেকে প্রবেশ করে থাকতে পারে।
এ নিয়ে হাতিয়ায় যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তেমনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর আগে এমন কুমির-প্লাবিত ঘটনার নজির আছে।
২০০৯ সালে কক্সবাজারের পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়নের একটি পুকুরে একাধিকবার কুমির দেখা গিয়েছিল। স্থানীয়রা মাছ মারার সময় কুমিরটির মুখোমুখি হয়।
২০১৮ সালে খুলনার ডুমুরিয়ায় একটি খালে কুমির দেখা যাওয়ার পর এক যুবক নিখোঁজ হন, পরে তার মরদেহ খালের পাশেই পাওয়া যায়।
২০২১ সালের মে মাসে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার এক পুকুরে কুমির ঢুকে পড়লে কয়েকটি হাঁস ও ছাগল নিখোঁজ হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এমন ঘটনার বেশিরভাগই উপকূলীয় অঞ্চলে ঘটে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঘূর্ণিঝড়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদীভাঙনের ফলে কুমির প্রাকৃতিক আবাসস্থল ছেড়ে মানুষের বসতিতে প্রবেশ করছে।
হাতিয়ার পুকুরে কুমিরের এই উপস্থিতি এখন পুরো দ্বীপজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।