Home সম্পাদকীয় সীমান্তে ভারতের পুশইন: মানবাধিকারের পরিপন্থী এক কৌশল

সীমান্তে ভারতের পুশইন: মানবাধিকারের পরিপন্থী এক কৌশল

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চল, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো সম্প্রতি এক অভূতপূর্ব বাস্তবতায় দাঁড়িয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলার এই দুই সীমান্তপথ দিয়ে  ৬৬ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এই নাগরিকরা সবাই ভারতের গুজরাট রাজ্যের বাসিন্দা এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বী। ভারতের ভূখণ্ড থেকে তাদের চোখ বেঁধে এনে বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে  এ যেন রাষ্ট্রীয় নিষ্ঠুরতার নগ্ন প্রদর্শনী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরণের পুশ ইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। কোনো দেশ তার নাগরিককে অন্য দেশের ভূখণ্ডে জোরপূর্বক পাঠাতে পারে না। অথচ ভারতের তরফে এমন কর্মকাণ্ড বারবার দেখা যাচ্ছে, বিশেষত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে। এতে শুধু বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে চির ধরছে না, বরং মানবিক সংকটও তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে এসব অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে এবং বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এনেছে। খাগড়াছড়ির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা জানিয়েছেন, আটককৃতদের পুশব্যাকের উদ্যোগ চলছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই ধরণের জটিল সংকটের পুনরাবৃত্তি কীভাবে রোধ করা হবে?

ভারতের অভ্যন্তরে বিশেষ করে হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসনামলে ধর্মীয় পরিচয়কে ভিত্তি করে নাগরিকত্বের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা বেড়েছে। বিতর্কিত এনআরসি এবং সিএএ আইন ইতিমধ্যেই ভারতের অভ্যন্তরে বহুল সমালোচিত। এবার বাস্তব মাঠে তার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে বিপন্ন জনগোষ্ঠীদের পার করে দেওয়া হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে, যেন তারা ভারতের দায় নয়।

বাংলাদেশের জন্য এটি শুধু একটি সীমান্ত ইস্যু নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং কূটনৈতিক মর্যাদার প্রশ্ন। বারবার এই ধরণের ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশকেও কড়া বার্তা দিতে হবে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় আরও শক্তিশালী নজরদারি, কূটনৈতিক পর্যায়ে জবাবদিহিতা দাবি এবং আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।

একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কখনোই অন্য কোনো দেশের নাগরিকের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হতে পারে না। ভারতের উচিত এ ধরনের অপকর্ম বন্ধ করে সীমান্তে সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা। আর বাংলাদেশ সরকারের উচিত কৌশলগত ও মানবিক উভয় দিক থেকেই বিষয়টি দ্রুত সমাধানের পথ খোঁজা।