পার্শ্ববর্তী দেশে দাম ৩০ টাকার মধ্যে
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই সরকারের বিবেচনার জন্য বাণিজ্য সচিব ও কৃষি সচিবকে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এক কেজি পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ১১০ টাকার বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাই দ্রুত সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদানের জন্য কমিশন সুপারিশ করেছে।
বিটিটিসির চেয়ারম্যান মইনুল খান জানান, কিছু মধ্যস্বত্বভোগী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “এ সময় প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম সাধারণত ৯০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু বাজারে দাম ১১৫ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশে একই পেঁয়াজের দাম প্রায় ৩০ টাকার মধ্যে। অভ্যন্তরীণ বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সীমিত পরিমাণে আমদানির অনুমোদন দ্রুত দেওয়া প্রয়োজন।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উচ্চ দামের সুবিধা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছাচ্ছে না; বরং মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানি করলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমবে এবং ভোক্তারা যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবে। গত অর্থবছরে দেশে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। সংরক্ষণ সমস্যা ও অন্যান্য কারণে বাজারে প্রায় ৩৩ লাখ টন পেঁয়াজ এসেছে।
বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি প্রধানত ভারতের মাধ্যমে হয়। মোট আমদানির ৯৯ শতাংশই আসে ভারত থেকে। এছাড়া তুরস্ক, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন ও মিসর থেকেও আমদানি হয়। গত অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৮৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। পেঁয়াজের ওপর বর্তমানে ১০ শতাংশ শুল্ককর প্রযোজ্য। গত চার বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৯ লাখ ১১ হাজার টন এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই থেকে তিন মাসে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকলেও এক সপ্তাহে মূল্য ৩৭-৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে দাম বাড়ার প্রবণতা থাকলেও এ বছর এক সপ্তাহের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হয়েছে। যা বাজার ব্যবস্থাপনা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কৌশলের ইঙ্গিত দেয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির কথা বলা হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানি করলে দাম কমবে। তবে কিছুদিন পর কৃষকের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন আমদানির ফলে কৃষকের ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রথমে অসদু ব্যবস্থাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। তারপরও দাম না কমলে সীমিত পরিমাণে আমদানির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তবে কৃষকের স্বার্থও বিবেচনায় রাখতে হবে।”










