Home স্বাস্থ্য পেটের মেদ কমাতে সহায়ক ১০ ফল

পেটের মেদ কমাতে সহায়ক ১০ ফল


হেলথ ডেস্ক

পেটের মেদ বা বেলি ফ্যাট শুধু সৌন্দর্যের সমস্যা নয়, এটি হৃৎপিণ্ডের রোগ, ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সিনড্রোমের মতো জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকির মূল কারণও হতে পারে। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথশটস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাদ্য, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, মানসিক চাপ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং জেনেটিক কারণ—সব মিলিয়ে বেলি ফ্যাট জমতে থাকে।

পুষ্টিবিদ আর্চনা এস বলেন, “উচ্চ-ক্যালরি ও পুষ্টিহীন খাবার নিয়মিত গ্রহণই মূলত পেটের চর্বি বাড়ায়। এছাড়া মানসিক চাপ থেকে নিঃসৃত কর্টিসল হরমোনও অভ্যন্তরীণ চর্বি বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।” তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফ্যাট কমানো সম্ভব নয়; তাই খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং মানসিক ভারসাম্য রক্ষার সমন্বিত উদ্যোগই কার্যকর উপায়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নিচের ১০টি ফল নিয়মিত খেলে পেটের মেদ কমাতে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে—

১. অ্যাভোকাডো (Avocado)

মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ এই ফল ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাধা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একটি অ্যাভোকাডো খেলে নারীদের পেটের মেদের বণ্টন তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর থাকে।

২. গ্রেপফ্রুট (Grapefruit)

গ্রেপফ্রুট ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে ও বিপাকক্রিয়া (metabolism) ত্বরান্বিত করে, যা পেটের চর্বি কমাতে সহায়ক। খাবারের ২০-৩০ মিনিট আগে এটি খাওয়া সবচেয়ে কার্যকর।

৩. বেরি (Berries)

ব্লুবেরি ও রাস্পবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আঁশে সমৃদ্ধ, যা ক্ষুধা কমায় ও ফ্যাট বিপাক বাড়ায়। জার্নাল অব ফাংশনাল ফুডস–এর গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত ব্লুবেরি খেলে ওজন ও শরীরের চর্বি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।

৪. আপেল (Apple)

আঁশ ও পানিতে ভরপুর আপেল দীর্ঘক্ষণ তৃপ্ত রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কমে যায়। জার্নাল অব দ্য আমেরিকান কলেজ অব নিউট্রিশন–এর তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত আপেল খেলে অতিরিক্ত ওজনের মানুষের ওজন কমাতে সহায়তা করে। প্রতিদিন একটি আপেল, খোসাসহ, সকালে বা ব্যায়ামের আগে খাওয়া ভালো।

৫. তরমুজ (Watermelon)

ক্যালরিতে কম ও পানিতে বেশি তরমুজ শরীরকে ডিটক্স করে ও চর্বি কমাতে সাহায্য করে। নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত তরমুজ খেলে ওজন, বিএমআই এবং রক্তচাপ তিনটিই হ্রাস পায়। খাবারের আগে দুই কাপ তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

৬. পেঁপে (Papaya)

পেঁপেতে থাকা প্যাপেইন এনজাইম হজমে সাহায্য করে এবং পেট ফেঁপে থাকা কমায়। বায়োমেডিক্যাল রিপোর্টস জার্নালের গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপে শরীরের প্রদাহ ও স্থূলতা সম্পর্কিত ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন এক কাপ কাটা পেঁপে খাওয়া স্বাস্থ্যকর।

৭. আনারস (Pineapple)

আনারসে থাকা ব্রোমেলিন এনজাইম হজমে সহায়তা করে ও ফাঁপাভাব কমায়। ফুড সায়েন্স অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, আনারসের রস স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন এক কাপ কাটা আনারস খাওয়া কার্যকর।

৮. কিউই (Kiwi)

ভিটামিন সি ও আঁশসমৃদ্ধ কিউই হজম ও চর্বি বিপাকে সাহায্য করে। জার্নাল অব নিউট্রিশনাল সায়েন্সেস অ্যান্ড ভিটামিনোলজি–এর গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন দুটি সোনালি কিউই খেলে শরীরের চর্বি ও রক্তচাপ উভয়ই কমে।

৯. ডালিম (Pomegranate)

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ ডালিম চর্বি বিপাক উন্নত করে এবং প্রদাহ কমায়। ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন–এর এক বিশ্লেষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ডালিম খেলে ওজন ও বিএমআই উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। প্রতিদিন এক কাপ ডালিমের দানা দুপুরে বা খাবারের পর খাওয়া ভালো।

১০. কমলা (Orange)

কমলা ভিটামিন সি ও পানিতে ভরপুর এবং ক্যালরি কম। এটি বিপাকক্রিয়া বাড়ায় ও শরীরকে সতেজ রাখে। প্রতিদিন একটি কমলা সকালবেলা বা ব্যায়ামের পর খাওয়া সবচেয়ে ভালো।

বিশেষজ্ঞ মত

পুষ্টিবিদ আর্চনা এস বলেন, “যে কোনো ওজন নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় নিয়মিত ফল, পর্যাপ্ত পানি, ব্যায়াম ও মানসিক প্রশান্তির ভূমিকা অপরিহার্য। শুধু খাদ্য পরিবর্তন নয়, জীবনযাপন পরিবর্তনই আসল চাবিকাঠি।”