Home কৃষি পেয়ারার নৌকায় ভেসে আসে লাভ আর ভালবাসা

পেয়ারার নৌকায় ভেসে আসে লাভ আর ভালবাসা

সংগৃহীত ছবি
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঝালকাঠি: সকাল গড়িয়ে বেলা যত বাড়ে, কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলি খাল যেন রঙিন হয়ে ওঠে সবুজ পেয়ারার ঢেউয়ে। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় বয়ে আনা হয় গ্রামবাংলার গর্ব—পেয়ারা। এ এক অভিনব হাট, যেখানে মাটির বদলে জল, দোকানের বদলে নৌকা, আর ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক মিশে যায় খালের জলের শব্দে।

দীর্ঘ দুই শতকেরও বেশি সময় ধরে গড়ে ওঠা এই পেয়ারা চাষ আর তার ভাসমান বাজার আজ শুধু কৃষির অংশ নয়, হয়ে উঠেছে এক টুকরো ঐতিহ্য। শ্রাবণ থেকে ভাদ্র—এই সময়টাই যেন পেয়ারা চাষিদের জীবনে সবচেয়ে ব্যস্ত মৌসুম। সকালে নৌকায় ওঠে পাকা ফল, আর খালে নামে জনারণ্য।

সম্প্রতি এই ভাসমান হাট দেখতে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবদেলোহাব সায়দানি। হাট দেখে মুগ্ধ হয়ে জানান, তাদের দেশে পেয়ারা উৎপাদিত হয় না, অথচ এখানকার পেয়ারার স্বাদ ও উৎপাদনের ধরন তাকে রপ্তানির সম্ভাবনার কথা ভাবতে বাধ্য করেছে।

পেয়ারা চাষি পরিমল হালদার জানান, “এই বছর ফলন একটু কম হলেও দাম ভালো পাচ্ছি। লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে এবার।” আরেক চাষি সব্রজিৎ বলেন, “পূর্বপুরুষদের এই পথ আমরা ধরে রেখেছি। তবে এবার বৃষ্টির অভাবে ফলন কম। দিনে যেখানে আগে চার-পাঁচ মণ বিক্রি করতাম, এখন কোনো দিন মাত্র ১০ কেজিও হয় না।”

ভাসমান হাটের আড়তদার সঞ্চয় হালদার বলেন, “চাহিদা প্রচুর, কিন্তু পণ্য কম। ফলে দাম বেড়েছে। এতে পাইকারদের লাভ হচ্ছে না।” পাইকার জামাল হোসেন বলেন, “যে দামে পেয়ারা কিনছি, সেই দামে বিক্রি করলেই লোকসান। কিন্তু এখানকার পেয়ারা সুস্বাদু, তাই মানুষ এখনো কিনে।”

ভীমরুলির প্রবীণ বাসিন্দা ভবেন্দ্রনাথ হালদার বলেন, “এই পেয়ারা আমাদের শিকড়, আবেগ। এই গাছগুলো আমাদের পারিবারিক বন্ধনের মতোই।”

শুধু চাষ আর বেচা-কেনা নয়, পর্যটনের নতুন মাত্রাও পেয়েছে ভাসমান হাট। ঝিনাইদহ থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক মশিউর রহমান বলেন, “নিজে পেয়ারা গাছ থেকে ফল ছিঁড়ে খাওয়া, এটা জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা। অসাধারণ লেগেছে।”

এখানে গড়ে উঠেছে কুড়িয়ানা পেয়ারা পার্ক পিকনিক স্পট। এর উদ্যোক্তা অর্ণব মজুমদার জানান, “বিদেশি পর্যটকরাও আসছেন নিয়মিত। আমরা চেষ্টা করছি পরিবেশবান্ধব পর্যটন গড়ে তুলতে।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, “এ বছর ৫৬২ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ হাজার ৬২৬ টন। বাজারে এর মূল্য কোটি টাকা ছাড়াবে।”

ভীমরুলির এই ভাসমান হাট তাই শুধু কৃষিপণ্য বিনিময়ের জায়গা নয়—এ এক জীবন্ত ইতিহাস, চাষির ঘামে育ত সৌন্দর্য আর বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্যের দ্যুতি।