Home আন্তর্জাতিক শেষ প্রার্থনায় জাতি-ধর্ম একাকার: পোপের প্রতি সম্মান জানাতে রোমে বিশ্বনেতারা

শেষ প্রার্থনায় জাতি-ধর্ম একাকার: পোপের প্রতি সম্মান জানাতে রোমে বিশ্বনেতারা

সংগৃহীত ছবি

পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে বিশ্ব নেতাদের মিলনমেলা: ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:

রোম, ২৬ এপ্রিল: বিশ্বখ্যাত ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য উপলক্ষে ইতালির রোমে সমবেত হয়েছেন শতাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজপরিবারের সদস্য, কূটনীতিক ও ধর্মীয় নেতারা। আজ সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি একাধারে ধর্মীয় আচার, রাজনৈতিক মিলনমেলা ও বিশ্ব ঐক্যের এক বিরল উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিচ্ছে।

৮৮ বছর বয়সে গত সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পোপ ফ্রান্সিস। সরল জীবনযাপন, প্রান্তিক মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও বিশ্বশান্তির আহ্বান—এই তিনটিই তাকে আলাদা করে বিশ্বব্যাপী ভালোবাসার প্রতীক করে তুলেছিল।

সাধারণের কফিন, ব্যতিক্রমী শেষযাত্রা

পোপ ফ্রান্সিস জীবদ্দশায়ই অনুরোধ করেছিলেন যেন তার শেষকৃত্যটি অত্যন্ত সরলভাবে সম্পন্ন হয়। সেই অনুযায়ী, তার মরদেহ একটি সাধারণ কাঠের কফিনে রাখা হয় এবং তাকে দাফন করা হবে তার পছন্দের স্থান সান্তা মারিয়া ম্যাজিওরে গির্জার একটি চিহ্নহীন সমাধিতে। এটি রোম শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং ১৪শ শতকে ভার্জিন মেরির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে নির্মিত

সংগৃহীত ছবি

হয়।

বিশ্বনেতাদের উপস্থিতি

শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ নেতারা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশাপাশি রোমে পৌঁছেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, স্পেনের রাজা ফিলিপ ষষ্ঠ ও রানী লেতিজিয়া, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তার স্ত্রীসহ অসংখ্য রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধি।

তিন দিনে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন আড়াই লাখ মানুষ

পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহ বুধবার সকালে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় আনা হলে তা জনসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। ভ্যাটিকানের তথ্যমতে, মাত্র তিন দিনেই আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। ব্যাসিলিকাটি প্রথম দিন রাতভর খোলা রাখা হয়, যাতে সবাই শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ পান।

ধর্মীয় সহাবস্থানের প্রতীক

এই আয়োজনটি শুধু ক্যাথলিকদের জন্য নয়, বরং বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মানুষের জন্যও এক আবেগঘন মুহূর্ত হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিনিধি, শোকাহত নাগরিক ও শান্তিকামী মানুষ এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক অস্থিরতা ও বিভেদের মধ্যেও এই শেষকৃত্যানুষ্ঠান বিশ্বে শান্তি ও সহানুভূতির বার্তা দিয়েছে। এটি যেন মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তঃধর্মীয় সংহতির এক অনন্য নজির হয়ে থাকল।

আগামী দিনগুলোর প্রতীক্ষা

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান ঘটল। এখন ক্যাথলিক চার্চের জন্য সামনে রয়েছে নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া। যদিও প্রয়াত পোপের ইচ্ছা ছিল পরবর্তী নেতৃত্ব যেন শান্তি, উদারতা ও মানবতার পথে অগ্রসর হয়—সেই দায়িত্ব এখন বিশ্ব ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের হাতে।