Home First Lead বার্ডফুডের চালানে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ পোস্তদানা

বার্ডফুডের চালানে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ পোস্তদানা

  • আমদানিকারক: কোরবানিগঞ্জ এলাকার মেসার্স আদিব ট্রেডিং,
  •  সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট: এম এইচ ট্রেডিং
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম:  পাকিস্তান থেকে আমদানি করা “বার্ড ফুড” ঘোষণার আড়ালে প্রায় ২৪ হাজার ৯৬০ কেজি নিষিদ্ধ পোস্তদানা (পপি সিড) জব্দ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চালানটির আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্স (এআইআর) শাখা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) এইচ এম কবির জানিয়েছেন, পাখির খাদ্যের নামে এই নিষিদ্ধ মাদকপণ্য আমদানির চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে গোয়েন্দা নজরদারির ফলে চোরাচালানের ওই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবর “বার্ড ফুড” হিসেবে দুই কনটেইনারে মোট ৩২ হাজার ১০ কেজি পণ্যের একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। পরবর্তীতে চালানটি খালাসের জন্য বেসরকারি অফডক ছাবের আহমেদ টিম্বার কোম্পানি লিমিটেডের ডিপোতে স্থানান্তর করা হয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছিল কোরবানিগঞ্জ এলাকার মেসার্স আদিব ট্রেডিং।

চালান খালাসের দায়িত্বে থাকা হালিশহরের শান্তিবাগ এলাকার এম এইচ ট্রেডিং কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লিমিটেড ১৪ অক্টোবর কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে “বার্ড ফুড” ঘোষণা দিয়ে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু চালানের উৎস, রপ্তানিকারক ও ব্যবসার ধরন পর্যালোচনায় কাস্টমসের সন্দেহ হয়। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে চালানটির খালাস স্থগিত করে লক করে দেওয়া হয়।

২২ অক্টোবর এআইআর শাখা ডিপো ও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে চালানটির কায়িক পরীক্ষা চালায়। পরীক্ষায় দেখা যায়, কনটেইনারের মুখে ৭ হাজার ২০০ কেজি বার্ড ফুড থাকলেও, ভেতরে লুকানো ছিল প্রায় ২৪ হাজার ৯৬০ কেজি পপি সিড। এইভাবে পণ্যটির আসল প্রকৃতি আড়াল করা হয়েছিল।

পরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোপ্রযুক্তি সেন্টার এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পাঠায়। তিনটি পরীক্ষাতেই পণ্যটি পপি সিড হিসেবে নিশ্চিত হয়।

কাস্টম কর্মকর্তারা জানান, পপি সিড বা পোস্তদানা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুসারে ‘ক’ শ্রেণির মাদক হিসেবে বিবেচিত। একই সঙ্গে আমদানি নীতি আদেশ ২০২১–২০২৪ অনুযায়ী এটি একটি নিষিদ্ধ পণ্য। যদিও বাংলাদেশে পোস্তদানা রান্নার মসলা হিসেবে ব্যবহৃত, তবুও এতে মাদকজাত উপাদান থাকায় এর আমদানি ও বিপণন আইনত দণ্ডনীয়।

বাংলাদেশ ট্রেড পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, পোস্তদানা বহু বছর ধরেই আমদানিনিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রয়েছে। তবুও সময় সময়ে সীমান্ত ও বন্দর দিয়ে এটি “ফিড আইটেম” বা “বার্ড ফুড” নামে আমদানির চেষ্টা হয়। কাস্টমস ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সম্প্রতি এমন মিথ্যা ঘোষণার ঘটনা বেড়ে গেছে।

কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমদানিকারকরা প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। আমরা এখন থেকে প্রতিটি খাদ্যপণ্য ঘোষণার চালান আরও কঠোরভাবে পরীক্ষা করব।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, কাস্টমসের কঠোর নজরদারি ও প্রযুক্তিনির্ভর তল্লাশি ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় নিষিদ্ধ পণ্যের আমদানি এখন আগের চেয়ে দ্রুত শনাক্ত হচ্ছে। ফলে অবৈধ মাদক উপকরণ চক্রগুলো চাপের মুখে পড়েছে, যদিও তারা পণ্যের নাম ও প্যাকেজিংয়ে কৌশল বদলে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জানিয়েছে, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারা আশা করছে, এই অভিযানের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির প্রচেষ্টা আরও কমে আসবে।