Home First Lead ২০১৬-এর পুনরাবৃত্তি: আবারও শিকলবন্দি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশিরা

২০১৬-এর পুনরাবৃত্তি: আবারও শিকলবন্দি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশিরা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে আরও ৩০ জন বাংলাদেশি অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যাদের প্রত্যেকেই ৬০ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রাপথে হাতকড়া ও শিকল পরিহিত অবস্থায় ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের তিন ঘণ্টা পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তাদের বিমান থেকে নামানো হয়, এর আগেই হাতকড়া ও শিকল খুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে এ ধরনের অমানবিক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের পরিপন্থী বলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার কর্মীরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

আগতদের মধ্যে ২২ বছর বয়সী নোয়াখালীর আব্দুল্লাহর মতো অনেকেই জানিয়েছেন, পুরোটা সময় তাদের দাগী আসামীদের মতো শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল। এক বিধ্বস্ত আব্দুল্লাহ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “একে তো দেশে ফেরত আসার হতাশা তার উপরে সন্ত্রাসীদের মতো হাতে পায়ে শিকল পরিয়ে মাতৃভূমিতে আসার মত ভয়াবহ পরিস্থিতি আর কারো না হোক।” দীর্ঘ যাত্রা এবং শিকল পরে থাকার কারণে এই ৩০ জন অভিবাসী ছিলেন শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

বিমানবন্দর সূত্র অনুযায়ী, বিমানটি রাত ১১টার পর নামলেও তিন ঘণ্টা রানওয়েতে ছিল, যেখানে যাত্রীদের হাতকড়া ও শিকল খোলা হয় এবং পরে রাত ২টার দিকে তাদের বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এরিয়াতে আনা হয়। এই প্রক্রিয়ার সময় কাউকে তাদের কাছে যেতে বা ছবি তুলতে দেওয়া হয়নি। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত কয়েক মাসে অন্তত ১৮০ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর আগেও ২ আগস্ট এক নারীসহ ৩৯ জন এবং ৮ জুন ৪২ জন বাংলাদেশিকে সামরিক ও চার্টার্ড ফ্লাইটে হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রত্যাবাসনের সময় হাতকড়া ও শিকল ব্যবহার করা উচিত নয়। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান এই প্রক্রিয়াকে “অত্যন্ত দুঃখজনক” আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষের জন্য সারা জীবনের ট্রমা হয়ে থাকে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও মানবিক হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে গুরুত্ব দেবে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালেও ২৭ জন বাংলাদেশিকে একই ধরনের কঠোর নিরাপত্তা এবং হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, যা তখন তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং বাংলাদেশ সরকার ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রগামী এই অভিবাসীদের এমন অসম্মানজনক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কেবল তাদের স্বপ্নকেই চূর্ণ করছে না, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালার গুরুতর লঙ্ঘনের প্রশ্নও তুলছে।