Home অন্যান্য ভূমধ্যসাগরের তলদেশে  মিললো প্রথম শতাব্দীর প্রমোদ তরী

ভূমধ্যসাগরের তলদেশে  মিললো প্রথম শতাব্দীর প্রমোদ তরী

 আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিসরের ঐতিহাসিক বন্দরনগরী আলেকজান্দ্রিয়ার উপকূলবর্তী ভূমধ্যসাগরের তলদেশে প্রথম শতাব্দীর একটি বিরল ও বিলাসবহুল প্রমোদতরীর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। প্রায় দুই হাজার বছর পুরোনো এই নৌযানটি প্রাচীন রোমান যুগের অভিজাত জীবনধারা ও নৌপ্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক দলটি জানায়, ডুবে যাওয়া প্রাচীন অ্যান্টিরোডোস দ্বীপের কাছাকাছি আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাচীন রাজকীয় বন্দর পোর্টুস ম্যাগনাস এলাকায় সমুদ্রতলে অনুসন্ধানের সময় এই নৌযানের কাঠামোর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জাহাজটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক পঁয়ত্রিশ মিটার এবং প্রস্থ প্রায় সাত মিটার। আকার ও গঠন অনুযায়ী এটি সাধারণ বাণিজ্যিক জাহাজ নয়, বরং ধনী শ্রেণি কিংবা রাজপরিবারের জন্য ব্যবহৃত একটি প্রমোদতরী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গবেষকদের মতে, নৌযানটির কেন্দ্রে একটি প্রশস্ত ও শোভাময় প্যাভিলিয়ন বা কক্ষ ছিল, যেখানে অতিথিদের আপ্যায়ন, উৎসব কিংবা নীল নদ ও উপকূলীয় এলাকায় বিনোদনমূলক ভ্রমণের আয়োজন করা হতো। কাঠের ধ্বংসাবশেষের আশপাশে গ্রিক ভাষায় খোদাই করা লেখার চিহ্নও পাওয়া গেছে, যা নৌযানটির ব্যবহারের সময়কাল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিচ্ছে।

এই আবিষ্কার প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসবিদ স্ট্রাবোর বিবরণকে নতুনভাবে সত্যতা দিয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। স্ট্রাবো তার লেখায় প্রথম শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়ায় ব্যবহৃত বিলাসবহুল নৌযানের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যেখানে অভিজাত শ্রেণি আনন্দভ্রমণ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিত। নতুনভাবে আবিষ্কৃত এই প্রমোদতরী সেই ঐতিহাসিক বর্ণনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলে যাচ্ছে।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, খ্রিস্টাব্দ পঞ্চাশের কাছাকাছি সময়ে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প কিংবা সুনামির ফলে উপকূলের একাংশ ডুবে গেলে নৌযানটিও সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায়। একই সময়ে অ্যান্টিরোডোস দ্বীপ ও আশপাশের স্থাপনা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল বলেও ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে।

বর্তমানে নৌযানটির ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রের তলদেশেই সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী, এটিকে সেখানেই রেখে আরও গবেষণা চালানো হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আবিষ্কার প্রাচীন মিসর ও রোমান যুগের সামুদ্রিক সংস্কৃতি, রাজকীয় বিনোদন এবং নৌপ্রযুক্তি সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে।

আলেকজান্দ্রিয়ার উপকূলে পাওয়া এই প্রমোদতরী শুধু একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ নয়, বরং প্রাচীন সভ্যতার ঐশ্বর্য, আনন্দ ও সমুদ্রকেন্দ্রিক জীবনের এক নীরব দলিল হিসেবেই ইতিহাসে স্থান করে নেবে।

ইতিহাসের গভীর থেকে উঠে আসা এমন আরও গল্প পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন প্রতিদিন।