Home শিক্ষা জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ খুন: প্রেমঘটিত জটিলতার জেরে মর্মান্তিক পরিণতি

জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ খুন: প্রেমঘটিত জটিলতার জেরে মর্মান্তিক পরিণতি

জুবায়েদ। ছবি সংগৃহীত
তারিক-উল-ইসলাম, ঢাকা: “ভালোবাসা যখন ঘৃণায় পরিণত হয়, তখন তা সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ নেয়”— কথাটা মনে পড়ে যায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প ‘প্রেমের সমাধি’-র। সেখানে ভালোবাসার অপূর্ণতা যে কিভাবে এক তরুণের জীবন কেড়ে নেয়, তা ছিল সাহিত্য। কিন্তু পুরান ঢাকার সরু গলিতে এবার সেই কাহিনি যেন বাস্তব হয়ে উঠল, রক্তমাখা সিঁড়িতে নিথর পড়ে থাকা এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর দেহে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনের হত্যাকাণ্ডে উঠে এসেছে এমন এক প্রেম-ঘৃণা-প্রতিশোধের গল্প, যা কল্পনাকেও হার মানায়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষার সাবেক প্রেমিক মাহির রহমানের ভালোবাসা ভেঙে যাওয়ার ক্ষোভ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “বর্ষা ও মাহিরের মধ্যে নয় বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা ছোটবেলা থেকে পাশাপাশি বাড়িতে বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু সম্প্রতি সম্পর্কে ভাঙন আসে। বর্ষা মাহিরকে জানায়, সে জুবায়েদকে পছন্দ করে, যদিও বিষয়টি জুবায়েদকে কখনও বলেনি। এই খবরেই রাগে ও ক্ষোভে মাহির তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে খুন করে জুবায়েদকে।”

ওসি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বর্ষা জানিয়েছেন, তিনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তার আচরণে কোনো হতাশা বা অনুশোচনার ছাপ পাওয়া যায়নি। “শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন স্থির ও চিন্তামুক্ত,” বলেন ওসি।

জুবায়েদ হোসাইন (২১) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন। গত এক বছর ধরে তিনি পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ১৫ নুরবক্স লেনে বর্ষাকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন।

রোববার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে সেই বাসার তৃতীয় তলায় রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় জুবায়েদের মরদেহ। সিঁড়ি থেকে তিন তলা পর্যন্ত ছড়ানো ছিল রক্তের দাগ, যেন কোনো নীরব সাক্ষী হয়ে আছে এক অসমাপ্ত ভালোবাসার ট্র্যাজেডির।

খুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তাল হয়ে ওঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখেন। পরে রাত ১১টার দিকে বর্ষাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

রাত ১০টা ৫০ মিনিটে জুবায়েদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে ঘটনার প্রায় ১৪ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।

ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, “আমরা মাহির রহমান ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি। হত্যার পেছনের প্রতিটি দিক আমরা খতিয়ে দেখছি।”

পুরান ঢাকার এক নিঃশব্দ গলিতে শেষ হয়ে গেল এক তরুণ ছাত্রনেতার জীবন, যে হয়তো বুঝতেও পারেনি, কারো পুরোনো প্রেমের গল্পে সে হয়ে উঠবে একটি ভয়ংকর উপসংহার।

সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এটি কেবল এক হত্যাকাণ্ড নয়, এ যেন মানুষের অনুভূতির সীমা ভাঙা এক বাস্তব ট্র্যাজেডি, যেখানে ভালোবাসা হার মানে প্রতিহিংসার কাছে।