বিনোদন ডেস্ক: দিনভর ফোনে মেসেজের ঝড়, সঙ্গীর সব কিছু জানানো আর উত্তর না পেলে অস্থির হয়ে ওঠা তা যেন প্রেমে ডুবে থাকার অনুভূতি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটি কি আসলেই প্রেম? নাকি আটকে পড়েছেন সিচুয়েশনশিপের ফাঁদে?
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, আধুনিক সম্পর্কের একটি বড় প্রবণতা হলো “সিচুয়েশনশিপ”—যেখানে সম্পর্কের নাম আছে, কিন্তু লক্ষ্য নেই। এতে সাধারণত একপক্ষ গভীরভাবে আবদ্ধ থাকলেও অন্যপক্ষ সম্পর্কটিকে গুরুত্ব দেন না। ফলে তৈরি হয় মানসিক চাপ, হতাশা আর আত্মবিশ্বাসে আঘাত।
প্রথমত, যদি দেখেন সঙ্গীর সঙ্গে সব পরিকল্পনাই হয় শেষ মুহূর্তে, তবে সতর্ক হোন। সত্যিকারের প্রেমে আগেভাগেই একসঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়। সঙ্গী যদি শুধু সুবিধামতো সময়ে আপনাকে ডাকেন, আর ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আলোচনায় পিছিয়ে যান, তাহলে এটি সম্পর্কের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ।
দ্বিতীয়ত, সম্পর্ক টিকে থাকার অন্যতম শর্ত হলো পারস্পরিক বিশ্বাস ও অনুভূতির প্রতি সম্মান। অথচ সঙ্গী যদি আপনার নিরাপত্তাহীনতা, ভয় বা পুরনো অভিজ্ঞতা শোনার পর গুরুত্ব না দেন, কিংবা হেসে উড়িয়ে দেন, তবে বোঝা যায় তিনি মানসিকভাবে সম্পর্কের গভীরে যুক্ত নন।
তৃতীয়ত, গবেষণা বলছে, সুস্থ সম্পর্ক সাধারণত সামাজিক পরিসরে দৃশ্যমান হয়। কিন্তু যদি সঙ্গী বহুবার বলার পরও পরিবার বা বন্ধুদের কাছে আপনাকে পরিচয় করাতে এড়িয়ে যান, তবে বোঝা যায় তিনি সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদি করার ইচ্ছা রাখেন না। এতে একধরনের গোপনীয়তার চাপ তৈরি হয়, যা দীর্ঘস্থায়ী হলে মানসিক অবসাদ ডেকে আনে।
সবশেষে, সঙ্গী যদি আপনার স্বপ্ন, ইচ্ছে বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কোনো আগ্রহই না দেখান, বরং এগুলোকে অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা মনে করেন, তবে বুঝতে হবে সম্পর্কটি একপাক্ষিক। কারণ প্রকৃত সঙ্গী সবসময় আপনার স্বপ্নে পাশে থাকবেন, উৎসাহ দেবেন এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করবেন।
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সিচুয়েশনশিপ মূলত আধুনিক নগরজীবনের ব্যস্ততা ও দায়বদ্ধতার ভয়ে তৈরি হওয়া এক ধরণের সম্পর্ক। এতে স্বাধীনতার ছদ্মবেশে দায়িত্ব এড়িয়ে চলার প্রবণতা থাকে। এ সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হলে মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে, বাড়তে পারে একাকিত্ব ও উদ্বেগ।
তাই সম্পর্ক নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকলে নিজের কাছে প্রশ্ন রাখুন—সঙ্গী কি আপনাকে স্বীকৃতি, সম্মান আর ভবিষ্যতের নিরাপত্তা দিচ্ছেন, নাকি শুধু সুবিধামতো সময় কাটাচ্ছেন? উত্তর খুঁজে পেলেই বুঝবেন, আপনি প্রেমে আছেন নাকি সিচুয়েশনশিপের ফাঁদে।