Home স্বাস্থ্য প্রতিদিন নিঃশ্বাসের সঙ্গে ঢুকছে সত্তর হাজার প্লাস্টিক কণা

প্রতিদিন নিঃশ্বাসের সঙ্গে ঢুকছে সত্তর হাজার প্লাস্টিক কণা

নতুন গবেষণায় চমকে ওঠা তথ্য, ঘর ও গাড়িই প্রধান উৎস

হেলথ ডেস্ক: আমরা প্রতিদিন কতটুকু দূষণ গ্রহণ করি তা নিয়ে সচেতনতা বাড়লেও মাইক্রোপ্লাস্টিক নামক এক ভয়ঙ্কর দূষণের মাত্রা এখনো আমাদের অনেকের অজানা। অথচ একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে প্রতিদিন একজন মানুষ গড়ে সত্তর হাজারেরও বেশি অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করছেন। অধিকাংশ সময়েই এটি ঘটছে নিজের ঘরের ভেতরে কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ির কেবিনে বসে থাকার সময়।

ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব টুলুজের দুই গবেষক নাদিয়া ইয়াকোভেনকো ও জেরোন সনকে তাঁদের নিজস্ব বাড়ি এবং গাড়ি থেকে সংগ্রহ করা মোট বারোটি বায়ু নমুনা বিশ্লেষণ করেন। রামান স্পেকট্রোস্কোপি নামক একটি উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায় যে একটি সাধারণ ঘরের প্রতি ঘনমিটার বাতাসে গড়ে ৫২৮টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ভেসে বেড়ায়। গাড়ির ক্ষেত্রে সংখ্যাটি প্রায় চারগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ২২৩৮টিতে।

এই তথ্যের ভিত্তিতে গবেষকরা হিসাব করে জানান একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ঘরের ভেতরে অবস্থানকালীন সময়ে প্রায় ৬৮ হাজারটি অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা এবং গাড়ির ভেতরে আরও প্রায় ৩২০০টি কণা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে নিচ্ছেন। এসব কণার ৯৪ শতাংশেরই দৈর্ঘ্য দশ মাইক্রোমিটারের কম যা এতই ছোট যে সহজেই ফুসফুসের গভীরে ঢুকে যেতে পারে।

মাইক্রোপ্লাস্টিকের এই উপস্থিতি আগের গবেষণাগুলোর তুলনায় শতগুণ বেশি বলে জানানো হয়েছে। এই কণা চুলের প্রস্থের চেয়েও অনেক সরু এবং প্রায় অদৃশ্য রূপে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। গবেষকদ্বয়ের মতে মানুষ সাধারণত তার নব্বই শতাংশ সময় কাটায় ঘরের মধ্যে যার মানে হচ্ছে এই দূষণ থেকে পালানোর কোনো বাস্তব উপায় নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই মাইক্রোকণাগুলো আসলে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত প্লাস্টিক উপাদান থেকেই তৈরি হচ্ছে। ঘরের আসবাবপত্র পর্দা কার্পেট এমনকি কিচেনের পাত্র থেকে শুরু করে গাড়ির সিট কাভার ড্যাশবোর্ড এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ থেকে প্রতিনিয়ত ক্ষয়ে বেরিয়ে আসছে এই কণা। সূর্যর আলো তাপমাত্রা ঘর্ষণ ও সময়ের ব্যবধানে এই ক্ষয় বাড়তে থাকে।

বিশেষ করে গাড়ির কেবিন এমন একটি ছোট ও বন্ধ জায়গা যেখানে বায়ু চলাচল সীমিত। গাড়ির প্লাস্টিক উপাদানগুলো উচ্চ তাপমাত্রায় ভেঙে পড়ে বেশি ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। পরিবেশ রসায়নের অধ্যাপক মিরিয়াম ডায়মন্ড বলেন গাড়ির কেবিনের বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ঘনত্ব এত বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সেখানে ব্যবহৃত প্লাস্টিক উপাদানগুলোতে অতিরিক্ত ফ্লেম রিটারডেন্ট বা আগুন প্রতিরোধক রাসায়নিক থাকে যা অধিক বিষাক্ত হতে পারে।

এই মাইক্রোকণাগুলো শরীরে প্রবেশের পর কতটা ক্ষতি করতে পারে সে সম্পর্কে এখনো গবেষণা চলমান। তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হৃদরোগ বিভিন্ন ক্যানসার স্নায়ুজনিত রোগ বন্ধ্যাত্ব এমনকি মস্তিষ্কে কণা জমে থাকার বিষয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন সব প্লাস্টিক সমান ক্ষতিকর নয়। স্টাইরিন জাতীয় কণা পলিথিন বা পলিপ্রোপিলিনের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিকর। আবার গোল কণা অপেক্ষা তীক্ষ্ণ ধারবিশিষ্ট কণা বেশি ক্ষতি করতে পারে।

কিছু মানুষ এই দূষণ এড়াতে নিজ উদ্যোগে ‘করসি রোসেনথাল বক্স’ নামের একটি ঘরোয়া এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করছেন যা বানাতে লাগে একটি বিশ ইঞ্চি ফ্যান ও চারটি উচ্চ মানের ফিল্টার। করোনাকালীন সময়ে এই ডিভাইসটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অনেকেই বছরে দুবার ফিল্টার পাল্টে দীর্ঘদিন ধরে এটি ব্যবহার করে আসছেন।

গবেষকদ্বয় জানান তাঁদের এই গবেষণা ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্য নীতিমালা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি মানুষকে ঘরের বায়ুমান নিয়ন্ত্রণে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এই গবেষণার ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে দূষণ কেবল বাইরের ব্যাপার নয়। ঘর কিংবা গাড়ির মতো কাছের পরিবেশেই রয়েছে এক নিঃশব্দ প্রাণঘাতী হুমকি।