বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: প্লাস্টিক আজ আর শুধু পণ্য নয়, এটি হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা ইউএনইপি একে আখ্যা দিয়েছে ‘বিশ্বের পরিবেশগত জরুরি অবস্থা’ হিসেবে। সংস্থাটির মতে, এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ না নিলে ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
প্রতি মিনিটে পরিবেশে ১ ট্রাক প্লাস্টিক:
ইউএনইপির হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য নদী, খাল ও সমুদ্রে মিশে যাচ্ছে, যার গড় হিসাব করলে প্রতি মিনিটে সমুদ্রে পড়ছে একটি বড় ট্রাক সমপরিমাণ প্লাস্টিক। এ ছাড়া বিশ্বে প্লাস্টিক উৎপাদন ২০২৫ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ৫১৬ মিলিয়ন টন-এ।
এই দূষণের ৮৫ শতাংশই একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্য, যার ৩৬ শতাংশ প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্য বা পণ্য মোড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরমে:
২০২৩ সালের ইউএনইপি রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক তৈরির পেছনে ব্যবহার হয় ১৩ হাজারের বেশি রাসায়নিক উপাদান। এর মধ্যে ৩২০০টির বেশি উপাদান মানবদেহে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইসব উপাদান ক্যানসার, হরমোন সমস্যা, গর্ভধারণজনিত জটিলতা এবং শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে।
সমুদ্র, মাটি ও খাদ্যশৃঙ্খলা এখন ঝুঁকিতে
বিশ্ব মহাসাগরের বর্জ্যের ৮৫ শতাংশই প্লাস্টিক। মাছসহ সামুদ্রিক জীবজন্তু এই প্লাস্টিক খেয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় ধরা পড়ছে। এমনকি প্লাস্টিক পচে গিয়েও মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হচ্ছে, যা খাদ্য ও পানির মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকে পড়ছে।
ইউএনইপি এর হিসাব মতে, শুধু ২০২০ সালেই ২.৭ মিলিয়ন টন মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি আগামী ১৫ বছরে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বৈশ্বিক চুক্তির অপেক্ষায় বিশ্ব
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইউএনইপি নেতৃত্বে বর্তমানে একটি বৈশ্বিক চুক্তির খসড়া তৈরি করা হচ্ছে, যা ‘গ্লোবাল প্লাস্টিকস ট্রিটি’ নামে পরিচিত। ২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া এ উদ্যোগের সর্বশেষ বৈঠক (INC-৫) হবে আগস্ট ২০২৫-এ জেনেভায়।
চুক্তির লক্ষ্য হচ্ছে—প্লাস্টিক উৎপাদন হ্রাস, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য উৎসাহ, এবং প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত আন্তর্জাতিক নীতিমালা চালু করা।
বাংলাদেশ কী করছে?
বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন ও নজরদারির অভাবে সেই উদ্যোগ কার্যকর হয়নি। শহরাঞ্চলে দৈনিক প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে, যার একটি বড় অংশ ড্রেন ও নদীতে গিয়ে ঠেকছে।
ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৮০০ টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মাত্র ৩৬ শতাংশ রিসাইক্লিং হয়। বাকিগুলো জমা হচ্ছে নদীতে, ড্রেনে, কিংবা খোলা জায়গায়। ফলে ডেঙ্গু, জলাবদ্ধতা এবং দূষণ আরও প্রকট হচ্ছে।
সমাধানে যা করা জরুরি
- রিসাইক্লিং ব্যবস্থা জোরদার করা
- প্যাকেটজাত পণ্যে বিকল্প উপাদানের ব্যবহার
- শিল্প ও ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি
- জাতীয় নীতিমালার কড়াকড়ি প্রয়োগ
- আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ
সংক্ষেপে:
- প্রতি বছর সমুদ্রে যায় ২৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক
- ১৩ হাজার রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার হয় প্লাস্টিকে
- ক্যানসারসহ বহু রোগের ঝুঁকি বাড়ছে
- গ্লোবাল চুক্তির খসড়া তৈরি করছে UNEP
- বাংলাদেশেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক