Home অন্যান্য বৃষ্টির দিনে দেখা: পর্ব-৩

বৃষ্টির দিনে দেখা: পর্ব-৩

পূর্ণিমার আলোয় ফয়েজ লেক

স্মৃতি হাসান

ফয়েজ লেকের পথে যাওয়ার আগে পুরো দিনটাতেই অনুপমের মন যেন কেঁপে কেঁপে উঠছিল।
বারবার মনে পড়ছিল সেই বার্তা—
“যার আগেই কেউ তোমাকে থামাতে না পারে…”

আসলে কে সেই মানুষ?
আর কেন সে লকেট খুঁজছে?

সন্ধ্যা নামতেই শহরের বাতিগুলো জ্বলে উঠল। আকাশে মেঘ নেই। আজ পূর্ণিমা। এমন রাতেই সবচেয়ে বেশি সত্য প্রকাশ পায়—এটা যেন শহরের নীরব বাতাসও বলে দিচ্ছে।

অনুপম লেকের ধারের পথ ধরে হাঁটছিল। পানি স্থির, মাঝে মাঝে বাতাসে হালকা ঢেউ উঠছে। চারপাশে অল্প আলো, কিন্তু পূর্ণিমার আলোয় পথ পরিষ্কার দেখা যায়।
তার মন ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছিল—যদি মেয়েটি বিপদে থাকে?

ঠিক তখনই—
একটি খুব পরিচিত কণ্ঠস্বর।

“তুমি এসেছ।”

অনুপম ঘুরে দাঁড়াল।
মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে লেকের ধারে। আজ সে শালীন কালো কামিজ পরেছে, চুলগুলো খোলা, পূর্ণিমার আলোয় মুখটা খুব শান্ত কিন্তু চোখ দুটো গভীর অস্থিরতায় ভরা।

“তুমি… ঠিক আছো তো?”
অনুপম এগিয়ে এল, কিন্তু মেয়েটি একধাপ পিছিয়ে গেল।

“না, আমি ঠিক নেই,” মেয়েটি বলল, “কিন্তু তুমি এসেছ… তার মানে তুমি এখন সত্য জানার জন্য প্রস্তুত।”

অনুপম চুপ।
বাতাসের শব্দ আর দূরের পানির ঢেউ ছাড়া কোনো শব্দ নেই।

মেয়েটি ধীরে বলল,
“যে দুর্ঘটনার কথা তুমি ভুলে গেছ—সেটা দুর্ঘটনা ছিল না।”

অনুপম বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল।
“মানে? তুমি বলতে চাও—”

“হ্যাঁ,” মেয়েটি বলল, “সেদিন ট্রাকটি তোমাকে উদ্দেশ্য করেই উঠেছিল।”

তার কথায় বাতাস যেন হঠাৎ থমকে গেল।

“কিন্তু কেন?” অনুপম বিস্মিত গলায় বলল।

মেয়েটি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কারণ তুমি লকেটটির ভেতরে কী আছে জানো না। কিন্তু যারা এটি খুঁজছে… তারা জানে লকেটটি কার হাতে উঠলে কার ক্ষতি হতে পারে।”

অনুপমের হাত থেকে খামের ঠান্ডা কাগজের ওজন আরও ভারী লাগতে শুরু করল।

“এটা শুধু একটা লকেট ছিল না?” সে ফিসফিস করে বলল।

মেয়েটির চোখ ভিজে উঠল।
“না অনুপম। এই লকেটের ভেতরে আছে একজন মানুষের নাম, যার মৃত্যু তোমার সামনে ঘটেছিল… আর তুমি দেখেছিলে… কিন্তু সেই স্মৃতি তুমি পুরোটা ভুলে গেছ।”

অনুপম চমকে ওঠে।
মনে যেন কিছু ভেসে উঠছে।
একটি ফ্ল্যাশ…
রক্ত…
চিৎকার…
আর তার হাত ধরে টেনে নেওয়া কেউ।

কিন্তু ফ্ল্যাশটা মিলিয়ে যায়।

“আমি… আমি কিছু দেখছি… কিন্তু পরিষ্কার না,” অনুপম কষ্টের গলায় বলল।

মেয়েটি তার হাত ছুঁয়ে দেয় এক মুহূর্তের জন্য। স্পর্শটা কোমল, কিন্তু খুব পরিচিত।
“তোমার স্মৃতি পুরোপুরি ভাঙতে আরেকটু সময় লাগবে। কিন্তু রাত দ্রুত ফুরোচ্ছে। আমরা এখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারব না।”

“কেন?” অনুপম প্রশ্ন করল।

মেয়েটি কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“কারণ যিনি তোমাকে খুঁজছে… তিনি আজ রাতেই এখানে আসবে। এবং তিনি জানেন, তুমি লকেট সম্পর্কে সত্য জানতে শুরু করেছ।”

তার কথার সাথে সাথেই লেকের পানি কেঁপে উঠল যেন।
লেকের দূরে একটি ছায়া নড়ল—পুরনো গাছের পাশে।
অনুপম চোখ কুঁচকে তাকাল।
কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে।

“ওই ব্যক্তি…” মেয়েটি ফিসফিস করল, “ইতিমধ্যে আমাদের খুঁজে পেয়েছে।”

হঠাৎ সেই ছায়ামূর্তি একটু এগিয়ে এলো—
ধীরে, খুব ধীরে।
চাঁদের আলোয় তার চোখ লালচে চকচক করতে দেখা গেল।

মেয়েটি আতঙ্ক নিয়ে বলল,
“অনুপম, দৌড়াও। এখনই।”

অনুপম মেয়েটির হাত শক্ত করে ধরল।
বাতাস আরও জোরে বয়ে গেল।
পেছনে থেকে ছায়ামূর্তির ভারী পদক্ষেপের শব্দ শোনা যাচ্ছে—

আর ঠিক সেই মুহূর্তে—
লেকের চারপাশের বাতিগুলো হঠাৎ একসাথে নিভে গেল।

অন্ধকার।
পূর্ণিমার আলো ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
খুব কাছে কারো নিঃশ্বাসের শব্দ—

সত্যের দরজা খুলে গেছে। এখন বিপদ ঠিক সামনেই।

পরবর্তী পর্বের জন্য  আগামীকাল  ভিজিট করুন: businesstoday24.com