বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:চীনের গুয়াংসি ঝুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সানজিয়াং ডং স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টিতে অনুষ্ঠিত হলো এক প্রাণবন্ত ফসল উৎসব। শুক্রবার সকালে কাউন্টির পাঁচটি টাউনশিপের বাসিন্দারা জমায়েত হন চাংকো (Chankou) গ্রামে—উৎপাদন ও পরিশ্রমের প্রতীক এই উৎসবে অংশ নিতে।
ধান কাটা শেষে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার এই আয়োজনকে ঘিরে গোটা গ্রাম সাজানো হয় উৎসবের সাজে। মাঠে, উঠানে ও গ্রাম চত্বরে বাঁশের তোরণ, রঙিন পতাকা, ঢাকঢোলের তালে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। ডং জাতিসত্তার পুরুষ ও নারীরা পরেন তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, গলায় রুপার অলংকার, হাতে ফসলের গুচ্ছ—সব মিলিয়ে যেন এক জীবন্ত লোকসংস্কৃতির মেলা।
উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গান। ঢোল, বাঁশি ও বীণার সুরে গ্রামজুড়ে বেজে ওঠে ডং জাতির লোকগীতি। তরুণরা কৃষিকাজের প্রতীকী ভঙ্গিতে নাচ পরিবেশন করেন, আর প্রবীণরা অংশ নেন ‘ধান দোল’ প্রতিযোগিতায়। কেউ কেউ দল বেঁধে মাঠের ধান শুকানোর প্রাচীন কৌশল দেখান—যা এখন পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় প্রদর্শনী হিসেবেই দেখা হয়।
এদিন স্থানীয় কৃষকেরা নিজেদের উৎপাদিত ধান, ভুট্টা, বাজরা, শাকসবজি ও হাতের তৈরি খাদ্যপণ্য প্রদর্শন করেন। উৎসবে ছিল গ্রামীণ হস্তশিল্পের প্রদর্শনীও—বাঁশের কাজ, কাপড় বোনা, রুপার গয়না তৈরি—সবই স্থানীয় সংস্কৃতির গভীর পরিচয় বহন করে।

সানজিয়াং অঞ্চলে ধানক্ষেতের সঙ্গে মাছ চাষ বা ‘রাইস-ফিশ কালচার’ অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই এই উৎসবে ধান ও মাছকে একসাথে ফসলের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। কৃষকরা বিশ্বাস করেন, প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের এই পদ্ধতিই তাদের জীবিকা ও সংস্কৃতির প্রাণ।
চাংকো গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ইয়াও মিং বলেন, “এই উৎসব শুধু আনন্দের নয়, এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি। আমরা ফসলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে শেখাই পরিশ্রম ও মিলনের মূল্য।”

দিনভর চলে গান, নাচ, খাবার ভাগাভাগি, আর একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞতার বিনিময়। সন্ধ্যায় আলোর ঝলকানিতে মুখরিত হয় গ্রাম। বিদেশি ও দেশি পর্যটকরাও অংশ নেন এ আনন্দে।
এই ফসল উৎসব শুধু কৃষির প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং সানজিয়াংয়ের ডং জনগোষ্ঠীর ঐক্য, পরিশ্রম ও সাংস্কৃতিক জীবনীশক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে—যা প্রমাণ করে, আধুনিকতার ভিড়েও ঐতিহ্যের শিকড় এখনো অটুট রয়ে গেছে।