আতঙ্ক নয়, এটি ছিল ‘ফায়ারবল’ উল্কা
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গের আকাশজুড়ে এক রহস্যময় আলোকপিণ্ড দেখা দেওয়ায় জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। জলপাইগুড়ি থেকে পঞ্চগড়—বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ আকাশের বুক চিরে দ্রুতগতিতে আগুনের গোলা ছুটে যেতে দেখেন। এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া বিকট শব্দ অনেককে আতঙ্কিত করে তুললেও বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে, এটি কোনো ভিনগ্রহের যান বা মিসাইল নয়, বরং একটি মহাজাগতিক উল্কাপাত।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিজ্ঞতা ও আতঙ্ক
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৭টা ১৫ মিনিটের মধ্যে পঞ্চগড় ও জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই দৃশ্য দেখা যায়। তেঁতুলিয়ার বাসিন্দা মোকসেদ আলী জানান, নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় তিনি হঠাৎ আকাশে আগুনের গোলার মতো কিছু একটা উড়তে দেখেন। স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন ইসলামের মতে, বস্তুটির গতিপথ এতই নিচে ছিল যে মনে হচ্ছিল সেটি এখনই কোথাও আছড়ে পড়বে। আলোর পাশাপাশি অনেক এলাকায় ‘শোঁ শোঁ’ বা বজ্রপাতের মতো বিকট শব্দ শোনা যায়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘মিসাইল’ বা যুদ্ধবিমানের বিভ্রম তৈরি করে।
চীনা রকেট ও মিসাইল গুজব নাকচ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই এটিকে চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষের পুনর্প্রবেশ (Re-entry) বলে দাবি করেন। তবে স্কাই ওয়াচার্স অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষজ্ঞ দেবাশিস সরকার এই দাবিকে সম্পূর্ণ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, “এদিন কোনো চীনা রকেটের আছড়ে পড়ার তারিখ ছিল না। যে ছবিগুলো ছড়ানো হচ্ছে, তার অনেকগুলোই কয়েক মাস পুরনো। এটি যে উল্কাপাত, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।”
বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনের ব্যাখ্যা
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া জেমিনিড (Geminids) উল্কাবৃষ্টিরই কোনো বড় অংশবিশেষ এটি হতে পারে। বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উপরে এই উল্কাপিণ্ডগুলো জ্বলন্ত আগুনের গোলার রূপ নেয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ‘ফায়ারবল’ বা ‘মিটিওর এয়ার বার্স্ট’ বলা হয়। দ্রুতগতিতে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের ফলে তৈরি হওয়া বায়বীয় চাপের কারণেই সেই বিকট শব্দের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ কায়েস এবং পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন: “প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এটি একটি উল্কাপিণ্ড। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি একটি স্বাভাবিক মহাজাগতিক ঘটনা।”
আকাশে দেখা যাওয়া আলোকপিণ্ডটি কোনো কৃত্রিম বস্তু ছিল না। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে এটি একটি প্রাকৃতিক উল্কা, যা বায়ুমণ্ডলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।










