বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধ, ঢাকা: ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় সরকার এখন পর্যন্ত ১২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘কেমন আছে জুলাই ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থানে নিহত গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবার এবং আহত শ্রমিকেরা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে সভা উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
ফারুক-ই আজম বলেন, “আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য দেশের সব সরকারি হাসপাতালে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ দায়িত্ব নিয়েছে। এ জন্য প্রত্যেককে একটি বিশেষ স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, অনেক আহত ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৫ জনকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া এবং তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ৩৪ জন থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন আছেন এবং তাদের সঙ্গে একজন করে পরিবারের সদস্য রয়েছেন।
চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নির্ধারণে একটি বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যেটিতে দেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন। তারা ঠিক করছেন কার কার বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন এবং পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা কীভাবে নির্ধারিত হবে।
আহতদের জন্য সরকারের পুনর্বাসন পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আহতরা যেসব কাজ করতে আগ্রহী, তাদের সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তারপর যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।” তিনি আরও বলেন, সরকার কোটা দিচ্ছে না, কারণ এই গণঅভ্যুত্থানই ছিল কোটার বিরুদ্ধে।
এ সময় ফারুক-ই আজম জানান, আহত ও নিহতদের সার্বিক সহায়তার জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটি থাকবে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করবে তাদের কল্যাণে।
তিনি বলেন, “সরকার এই ঘটনাকে একটি জাতীয় গণঅভ্যুত্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণি বা গোষ্ঠীর নয়, বরং এটি ছিল জনগণের সম্মিলিত বিদ্রোহ। এই আত্মত্যাগ জাতির চেতনার অংশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।”
উপদেষ্টা আরও বলেন, “এই গণঅভ্যুত্থান একটি নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এখন সব রাজনৈতিক দল মিলে ভবিষ্যৎ নির্মাণে একত্রিত হচ্ছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শ্রমিক ব্যবস্থার অসঙ্গতি দূর করে একটি স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই এখন জাতীয় লক্ষ্য।”
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, সংগঠনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা, স্কপের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের হাওলাদার এবং ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার।