Home স্বাস্থ্য ওজন কমাতে উপবাস: কোন ফাস্টিং পদ্ধতি আপনার জন্য সেরা?

ওজন কমাতে উপবাস: কোন ফাস্টিং পদ্ধতি আপনার জন্য সেরা?

স্বাস্থ্য প্রতিবেদন:

ওজন কমানোর সহজ, খরচবিহীন এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি হিসেবে ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে শুরু করে, এখন এটি হয়ে উঠেছে একধরনের স্বাস্থ্য-নির্ভর ‘বায়ো-হ্যাকিং’।

হলিউড তারকা জেনিফার অ্যানিস্টন, রিস উইদারস্পুন থেকে হিউ জ্যাকম্যান—অনেকেই ফাস্টিংয়ের মাধ্যমে সুগঠিত দেহ গঠনের কথা স্বীকার করেছেন। বিশেষ করে ১৬ ঘণ্টা উপবাস রেখে ৮ ঘণ্টার মধ্যে খাবার খাওয়ার নিয়ম, যা ‘১৬/৮’ পদ্ধতি নামে পরিচিত, তা সবচেয়ে বেশি আলোচিত।

তবে ফাস্টিং কি সবসময় সবার জন্য নিরাপদ? কোন পদ্ধতিটি আপনার জীবনের সঙ্গে মানানসই? চলুন জেনে নিই।
১. ১২ ঘণ্টার ফাস্ট: সহজ ও নিরাপদ

অফিসে ব্যস্ত মা কিংবা কর্মজীবী কেউ যদি সকালের ৭টা থেকে সন্ধ্যার ৭টা পর্যন্ত খেয়ে থাকেন, তবে আপনি স্বাভাবিকভাবেই ১২ ঘণ্টার ফাস্ট পালন করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, এই সময়সীমা ঘুম এবং রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফলে ওজন কমানো সহজ হয়।

বিশেষ সতর্কতা: নারীদের জন্য ১২ ঘণ্টার বেশি উপবাস ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এটি কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে মাসিক অনিয়ম, মুড সুইং ও খাওয়ার অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।
২. ১৬/৮ পদ্ধতি: জনপ্রিয় ও কার্যকর

এ পদ্ধতিতে প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা উপবাস রেখে বাকি ৮ ঘণ্টায় খাবার খেতে হয়। একজন কর্মজীবী যদি রাত ৮টার মধ্যে ডিনার শেষ করে এবং পরদিন দুপুর ১২টার আগে কিছু না খান, তাহলে এটি ১৬/৮ ফাস্ট।

একজন ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, তিনি এক বছরে ২১ পাউন্ড ওজন কমিয়েছেন এই নিয়ম মেনে চলেই।

বিশেষ টিপস: খাবারের সময় যেন বেশি খেয়ে না ফেলেন। সুষম পুষ্টিকর খাবার—শাকসবজি, প্রোটিন, আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি খাওয়ার দিকে গুরুত্ব দিন।
৩. ২৪ ঘণ্টার ফাস্ট (OMAD): মাত্র এক বেলার খাবার

‘ওয়ান মিল আ ডে’ বা OMAD পদ্ধতিতে দিনে একটি মাত্র খাবার খাওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিকেলে এই খাবার নেওয়া হয়। এটি দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমাতে পারে।

তবে চিকিৎসকরা সাবধান করছেন—এই পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া কঠিন। বিশেষ করে যাঁরা শরীরচর্চা করেন, তাঁদের জন্য একবেলা প্রোটিন খাওয়া যথেষ্ট নয়।

বিশেষ টিপস: একটানা ২৪ ঘণ্টা উপবাস নতুনদের জন্য নয়। মাথাব্যথা, দুর্বলতা এবং মেজাজ খারাপ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই পদ্ধতি অনুসরণ না করাই ভালো।
৪. ৩৬ ঘণ্টার ফাস্ট: সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন

এই ফাস্টিং সাধারণত খুবই কঠিন এবং অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ এই পদ্ধতি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। কারণ দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর অনেকেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন, যা ওজন কমানোর চেয়ে ওজন বাড়াতেই সহায়ক হয়।

তবে কিছু গবেষণা বলছে, দীর্ঘ সময় ফাস্টিং শরীরের কোষে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করে, যা বার্ধক্য বিলম্বিত করে এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে উপকারী হতে পারে।

বিশেষ সতর্কতা: প্রতিদিনের মতো পানি খাওয়াই যথেষ্ট নয়—খাদ্য গ্রহণ না থাকায় পানি আরও বেশি খেতে হবে। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া ৩৬ ঘণ্টার উপবাস বিপজ্জনক হতে পারে।
উপবাস কি সত্যিই কাজ করে?

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক ম্যাটসনের মতে, ফাস্টিং শুরু হলে শরীর প্রথমে খাবার থেকে গ্লুকোজ ব্যবহার করে, এরপর ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে—এটা হতে সময় লাগে প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কত ঘণ্টা ফাস্ট করছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি কত ক্যালরি গ্রহণ করছেন।

অর্থাৎ, দিনে ১৮০০ ক্যালরি খেলে তা দুই ঘণ্টার মধ্যে খান বা আট ঘণ্টার মধ্যে, ওজন কমাতে প্রভাব একরকমই হবে।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কারও জন্য হতে পারে চমৎকার একটি উপায় ওজন নিয়ন্ত্রণের। তবে বয়স, স্বাস্থ্য এবং জীবনের ধরণ অনুযায়ী পদ্ধতি বেছে নেওয়া জরুরি। উপবাস মানেই সব খাবার বাদ নয়—সঠিক সময়ে সঠিক খাবারই ওজন কমানো ও সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।