রেড রাস্ট, ফিউসেরিয়াম ও ব্লাইটে আক্রান্ত
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের চা বাগানে চরম বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই কৃষি খাত। হেক্টরের পর হেক্টর চা গাছের কচিপাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। মূলত ‘ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট’ নামে ভয়াবহ এক রোগ ছড়িয়ে পড়েছে বাগানজুড়ে, যার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে আরও দুটি মারাত্মক রোগ ‘রেড রাস্ট’ এবং ‘ফিউসেরিয়াম’।
চা গবেষণা সংস্থা টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (টিআরএ) জানিয়েছে, আসামের গোলাঘাট, শিবসাগর, সোনিতপুর, দিজু ও পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার বহু বাগানেই এই তিনটি রোগের আক্রমণ দেখা যাচ্ছে একযোগে। এ রোগে আক্রান্ত পাতার কোষ শুকিয়ে গিয়ে কালচে রঙ ধারণ করে, যা শেষ পর্যন্ত পুরো গাছের বৃদ্ধি থামিয়ে দেয়। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে—কোনো রাসায়নিক ওষুধই এই ব্যাকটেরিয়াল রোগ সম্পূর্ণভাবে দমন করতে পারছে না।
চা গাছের নতুন কুঁড়িগুলোর গায়ে প্রথমে বাদামি ছোপ দেখা যায়, এরপর সেগুলো কালচে হয়ে ঝরে পড়ে। টিআরএর তথ্য মতে, ‘ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট’-এর জন্য দায়ী Xanthomonas campestris pv. theicola, যা প্রধানত বর্ষাকালের অতিরিক্ত আর্দ্র পরিবেশে দ্রুত ছড়ায়।
এর পাশাপাশি ‘রেড রাস্ট’ এক ধরনের শৈবালঘটিত রোগ, যা গাছের কাণ্ড ও ডালে লালচে আবরণ তৈরি করে এবং গাছের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে ‘ফিউসেরিয়াম’ এক ধরনের ছত্রাক, যা গাছের শিকড় ধরে পচন ধরিয়ে দেয়, ফলে পুরো গাছই মরে যায়।
এই তিনমুখী আক্রমণের কারণে চা বাগানগুলোতে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল। অনেক বাগানে ইতিমধ্যে চা পাতা সংগ্রহ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
চা বোর্ড অব ইন্ডিয়ার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিজনেসটুডে২৪-কে জানান, “বর্তমানে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আছি। তবে রোগটির গতিবিধি যেভাবে ছড়াচ্ছে, তা ঠেকাতে হলে প্রাকৃতিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকেই জোর দিতে হবে।”
অন্যদিকে বাগান মালিকদের সংগঠন দাবি করেছে, এ বছর উৎপাদন অন্তত ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এর ফলে চায়ের বাজারমূল্য বাড়বে, একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের চায়ের রপ্তানি প্রতিযোগিতায় ভারত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টানা বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, এবং অপর্যাপ্ত ছায়াযুক্ত বাগানে এসব রোগের প্রকোপ বেশি। পাশাপাশি দীর্ঘদিন একই কীটনাশক ব্যবহারের ফলে গাছের প্রতিরোধক্ষমতা কমে এসেছে, যা রোগ ছড়াতে সহায়তা করছে।
এই অবস্থায় বাগান মালিক, চা বোর্ড ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বিত উদ্যোগ না হলে আসন্ন মৌসুমে চা শিল্পে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধস নেমে আসতে পারে।