আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তানের ইতিহাসে দীর্ঘ ৬৭ বছর পর ফের একজন সেনা কর্মকর্তাকে দেওয়া হলো দেশের সর্বোচ্চ সামরিক উপাধি ফিল্ড মার্শাল। ১৯৫৮ সালে জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান এই পদে উন্নীত হয়েছিলেন, যেটি ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণের অংশ হিসেবে এক অনন্য ঘটনা। তার পরে আর কেউ এই পদ পাননিঅন্তত ২০২৫ সালের আগে পর্যন্ত।
এবার সেই শূন্যস্থান পূরণ করলেন সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির, যিনি ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ ‘মারকা-ই-হক’ ও ‘অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস’-এ নেতৃত্ব দেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ফিল্ড মার্শাল হিসেবে ঘোষিত হয়েছেন।
আইয়ুব খান ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম সারির অফিসারদের একজন। পাকিস্তান সৃষ্টির পরে দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে তিনি ১৯৫১ সালে সেনাবাহিনীর প্রধান হন।
তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দুর্বল গণতন্ত্রের সুযোগে ১৯৫৮ সালে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে সামরিক শাসন জারি করেন এবং নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন।
এর কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি নিজেকে ‘ফিল্ড মার্শাল’ উপাধি দেন, যা ছিল রাজনৈতিক ও প্রতীকী—কোনো বড় ধরনের যুদ্ধজয়ের সঙ্গে যুক্ত নয়। বরং এটি ছিল ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার একটি রণকৌশল।
তার এই পদোন্নতি বিতর্কিত ছিল অনেকে মনে করেন, এটি ছিল একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শুরু। তার শাসনামলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ হন এবং ১৯৬৫ সালের যুদ্ধেও পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক পদে থেকে ভূমিকা পালন করেন।
৬৭ বছর পর ফিল্ড মার্শাল উপাধি পেলেন সৈয়দ আসিম মুনির, যিনি ২০২২ সালে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২০২৫ সালের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার জেরে উভয় দেশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ভারতীয় বিমান হামলা, ড্রোন অভিযান ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে।
এই সংঘর্ষের নেতৃত্বে থাকেন জেনারেল মুনির, যিনি কূটনৈতিক চাপ ও সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেন।
এই অভূতপূর্ব উত্তেজনার মধ্যে জ্ঞান, ধৈর্য ও প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করে পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা।
ফিল্ড মার্শাল পদটি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে চাকরিজীবনের চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ মর্যাদার স্তর, যা মূলত ব্রিটিশ সেনা কাঠামো থেকে গৃহীত। তবে এটি সাধারণত যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
আইয়ুব খান তা অর্জন করেছিলেন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, অন্যদিকে আসিম মুনির তা পেয়েছেন সামরিক নেতৃত্ব ও কৌশলের ভিত্তিতে।
পাকিস্তানের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মাত্র দুইজন ফিল্ড মার্শাল হয়েছেন। প্রথমজন আইয়ুব খান, দ্বিতীয়জন আসিম মুনির।
দুই জনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও পদটি একইভাবে রাষ্ট্রের জন্য একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্তের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।










