বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কুমিল্লা: লাকসামে প্রেমিককে খুঁজতে এসে এক তরুণী যে ভয়াবহতার মুখোমুখি হবেন, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। একটি অটোরিকশায় ওঠা, একজন অচেনা চালকের ‘সহানুভূতি’—সবকিছু যেন তাকে ঠেলে দেয় এক ভয়ংকর ফাঁদে। শেষ পর্যন্ত একদল বখাটের হাতে মারধর আর যৌন সহিংসতার শিকার হন তিনি।
২০ বছর বয়সী এই তরুণী মোবাইলে পরিচিত এক তরুণ রিফাতের খোঁজে ৮ জুন লাকসাম বাজারে যান। অটোরিকশাচালক এনায়েতুর রহমান সাক্কু তাকে রিফাতকে খুঁজতে সাহায্য করার আশ্বাস দেন। সন্ধ্যার পরও রিফাতের দেখা না পেয়ে তারা বসে পড়ে লাকসাম রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে।
কিন্তু সেখানে অপেক্ষা করছিল আরেকটি বিভীষিকা। কিছু বখাটে তরুণীকে ঘিরে ধরে। পরিস্থিতি এড়াতে সাক্কু নিজেকে তার ‘স্বামী’ বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু রাত গভীর হলে মুখোশ খুলে পড়ে। সাক্কু ও বখাটেরা মিলে তরুণীকে একপর্যায়ে স্টেশন থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় রেললাইনের পূর্ব পাশে একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে। সেখানে এনায়েতের সহায়তায় সাগর, স্বপন ও খোরশেদ নামের তিনজন তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ধর্ষণের পর আতঙ্কিত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তরুণী রেললাইন পার হয়ে একটি অটোরিকশায় উঠে নিজ কর্মস্থলে যান। পরে পরিবারের সহায়তায় সাহস করে থানায় যান তিনি।
সোমবার রাতে লাকসাম থানায় তরুণীর মামাতো ভাই বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে এনায়েত, সাগর ও স্বপনকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) তাদের আদালতে হাজির করা হলে তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
ওসি নাজনীন সুলতানা জানান, ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে এবং আদালতে তার জবানবন্দিও গ্রহণ করা হয়েছে। পলাতক আসামি খোরশেদকে ধরতে অভিযান চলছে।
এই ঘটনা শুধু একটি ধর্ষণের গল্প নয়, এটি এক অসহায় নারীর বিশ্বাস ভাঙার, প্রতারণার ফাঁদে পা ফেলার এবং সামাজিক অমানবিকতার নির্মম চিত্র। সঠিক বিচার না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে না—আশা, এবার অপরাধীরা আইনের সর্বোচ্চ সাজা পাবে।