Home First Lead ট্রাম্পের ইরানের ফোর্দো স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা: বিশ্ববাসীর উদ্বেগ

ট্রাম্পের ইরানের ফোর্দো স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা: বিশ্ববাসীর উদ্বেগ

 আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা পর্যালোচনার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। কাতারভিত্তিক আল জাজিরা সংবাদমাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সূত্র এবং মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে সম্প্রতি এই খবর প্রকাশ করেছে।

ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা ও তার গুরুত্ব

ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্রটি হলো একটি অত্যন্ত সুরক্ষিত ও ভূগর্ভস্থ স্থাপনা, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অন্যতম মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই স্থাপনা মূলত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণের কাজ করে থাকে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা আইএইএ নিয়মিত এখানে তত্ত্বাবধান চালায়। ফোর্দোর ভূগর্ভস্থ অবস্থান ও সুরক্ষার কারণে এটি ধ্বংস করা অত্যন্ত কঠিন এবং কোনো সামরিক হামলার ক্ষেত্রে এটি একটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষ্য।

হামলার পরিকল্পনা ও সামরিক প্রযুক্তি

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা মহল ফোর্দোতে হামলার সম্ভাব্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি ফোর্দোতে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে হবে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “বাঙ্কার ধ্বংসকারী” বোমা এবং বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ।

বাঙ্কার ধ্বংসকারী বোমাগুলো ভূগর্ভস্থ সুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য তৈরি, যেগুলো অনেক মিটার মাটি ও কংক্রিট পেরিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। অন্যদিকে, বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমানগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে লুকিয়ে হামলা চালাতে পারে, যা রাডারের চোখ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এই বিমানগুলো অত্যন্ত দূরত্ব পাড়ি দিয়ে এবং উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক নিয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম।

সামরিক ও কূটনৈতিক প্রভাব

ফোর্দোর মতো একটি স্থাপনায় হামলা চালানো হলে, তা ইরান ও পশ্চিমাদের মধ্যকার উত্তেজনা বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে। ইরান থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা আরও জোরালো হবে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন। এছাড়া, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিতের বদলে তা আরও গোপনীয় ও দ্রুততর হতে পারে।

মার্কিন প্রশাসন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্য করেনি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি রুখতে কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্ববাসী ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই সম্ভাব্য হামলার কারণে, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে কূটনৈতিক পথ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে এবং ইরানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাইছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সময়ে সামরিক পদক্ষেপ ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্লোবাল নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। তাই বিশ্ব রাজনৈতিক মঞ্চে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করার দিকেই নজর থাকা উচিত।


সংক্ষেপে

  • মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
  • ফোর্দো একটি সুগভীর ভূগর্ভস্থ ও শক্তিশালী সুরক্ষিত স্থাপনা, ধ্বংস করা কঠিন।
  • হামলার জন্য ‘বাঙ্কার ধ্বংসকারী’ বোমা ও বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমানের ব্যবহার প্রয়োজন হতে পারে।
  • হামলা হলে ইরান ও পশ্চিমাদের মধ্যকার উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে ও গ্লোবাল নিরাপত্তা বিপন্ন হবে।
  • আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে।