এভিযেশন ডেস্ক: ইউরোপের আকাশপথে ভ্রমণ এখন আরও জটিল হয়ে উঠছে। অনলাইনে চেক-ইনের সুবিধা যাত্রীদের দীর্ঘ সারি এড়াতে সাহায্য করলেও, এবার নতুন বায়োমেট্রিক Entry/Exit System (EES) চালুর পর ইউরোপের বিভিন্ন বিমানবন্দরে দেখা দিয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। যান্ত্রিক ত্রুটি ও সীমিত জনবলের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সীমান্ত কর্মকর্তাদের হাতে কলমে যাত্রী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হচ্ছে, ফলে তৈরি হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা।
পর্তুগালের লিসবনের হামবার্তো ডেলগাডো বিমানবন্দরে জুন মাসে ভয়াবহ ভিড়ের কারণে easyJet–এর ফ্লাইট মিস করেন এম কানিংহাম নামের এক যাত্রী ও তার স্বামী। দ্য টাইমস–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এম জানান,
“ছুটি শেষে আমরা সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছে অনলাইন চেক-ইন করেছিলাম। কিন্তু দেখি বিশাল লাইন পাসপোর্ট কন্ট্রোলের সামনে, বলা হলো অন্তত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। কোথাও আগে থেকে কোনো সতর্কবার্তা বা বিজ্ঞপ্তি ছিল না।”
তারা জানান, দীর্ঘ সময় সারিতে দাঁড়িয়ে অবশেষে যখন পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ পার হন, ততক্ষণে বোর্ডিং শেষ। আরও কয়েকজন যাত্রী একই কারণে ফ্লাইট মিস করেন। পরে নিজেদের খরচে নতুন টিকিট কিনে দেশে ফিরতে হয় তাদের।
easyJet দায়িত্ব অস্বীকার করলেও, যাত্রীদের বীমা দাবির জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
ইইউর নতুন EES চালুর পর ব্রাসেলস বিমানবন্দরেও দেখা দিয়েছে একই সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের যাত্রী রেবেকা ওয়েলস জানান, সোমবার বিমানবন্দরে পৌঁছে প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “ইউরোপীয় পাসপোর্টধারীদের লাইন অনেক ছোট ছিল, তারা দ্রুতই পার হয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু নন-ইইউ যাত্রীদের লাইনে কেউ কোনো তথ্য বা দিকনির্দেশনা দেয়নি।”
রেবেকা আরও জানান, নতুন বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু হলেও কর্মকর্তারা তার পাসপোর্টে আগের মতোই সিল মেরেছেন, ফিঙ্গারপ্রিন্টও নেননি।
রবিবার থেকে কার্যকর হওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের Entry/Exit System (EES)–এর আওতায় এখন নন-ইইউ নাগরিকদের ২৯টি ইউরোপীয় দেশে প্রবেশ ও প্রস্থানকালে আঙুলের ছাপ ও ছবি তুলতে হবে। পাশাপাশি, প্রতিটি যাত্রীর আগমন ও প্রস্থানের তারিখও ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এর ফলে পুরনো ‘পাসপোর্টে সিল মারা’ পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যাপ্ত জনবল না দেওয়ার কারণে দেরি হচ্ছে; অন্যদিকে সরকার বলছে, বিমানবন্দরগুলো একসঙ্গে অতিরিক্ত ফ্লাইট সূচি রেখেছে। বিমান সংস্থাগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করছে, তাদের বক্তব্য—“এয়ারপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যার জন্য এয়ারলাইন দায়ী নয়।”
পর্যটন মৌসুমের শেষদিকে ইউরোপের প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে এই বিশৃঙ্খলা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রার আগে অনলাইনে EES সংক্রান্ত আপডেট দেখা, এবং অন্তত তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানোই এখন সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।