ফ্ল্যাট ক্রেতার গাইডলাইন
কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: ফ্ল্যাট কেনার পর দায়িত্ব শেষ হয় না, বরং সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন বাস্তবতা। ভবনের পানি, বিদ্যুৎ, লিফট, নিরাপত্তা, কেয়ারটেকার ও সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে মাসিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বা মেইনটেন্যান্স চার্জ অনিবার্য। কিন্তু ব্যক্তি মালিকানায় নির্মিত ফ্ল্যাট বা সমিতিবিহীন ভবনে এই খরচ কে নেবে, কিভাবে নেবে, কাকে দেবেন টাকা—এই নিয়েই সৃষ্টি হয় অনন্ত বিবাদ।
কেয়ারটেকারকে বেতন দিলেন, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ অন্যের
অনেক সময় ভবনে থাকা মূল মালিক বা নির্মাতা নিজেই কেয়ারটেকার নিয়োগ দেন। কিন্তু বেতন দেন ফ্ল্যাট মালিকরা। এ অবস্থায় দেখা যায়, কেয়ারটেকার একজন বিশেষ মালিকের কথাই শোনে, যে তাঁকে এনেছে, বাকি মালিকদের প্রয়োজন বা অভিযোগকে উপেক্ষা করে।
রক্ষণাবেক্ষণের নামে বাড়তি টাকা দাবি
অনেক ক্ষেত্রে নির্মাতা বা বাড়ির মূল মালিক মাসে মাসে ‘সাধারণ খরচ’ বাবদ একটি নির্দিষ্ট অঙ্ক আদায় করেন, অথচ সেটার কোনো হিসাব থাকে না। লিফট খারাপ, পানি নেই, আলো জ্বলছে না, তবু খরচ ঠিকই চলছে। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলা হয়, “এটা ঠিক হয়ে যাবে”। অথচ কয়েক মাস বা বছরেও কিছু ঠিক হয় না।
সমিতি না থাকলে সমাধান নেই?
ব্যক্তিমালিকানায় নির্মিত ভবনগুলোতে সাধারণত ফ্ল্যাট মালিকদের কোনো নিবন্ধিত সমিতি থাকে না। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা অর্থ ব্যয়—সবকিছু চলে ‘কে বেশি জোরে বলছে, সে ঠিক’ নীতিতে। এতে সম্মিলিত উদ্যোগ ব্যাহত হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম অকার্যকর হয়ে পড়ে।
আইনি দৃষ্টিতে খরচের দায় সবার
যৌথ মালিকানাধীন ভবনে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সব মালিকের মধ্যে যৌথভাবে বহনযোগ্য। যদিও ব্যক্তিগত ফ্ল্যাটে আপনি স্বাধীন, কিন্তু ভবনের সিঁড়ি, ছাদ, কেয়ারটেকার, পানির পাম্প, লিফট বা করিডোর—এসব সবার ব্যবহারের জায়গা। সুতরাং এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়ও সবার।
সমাধান: লিখিত নিয়ম ও সমিতি গঠন
১. রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় নির্ধারণে মালিকদের নিয়ে মাসিক বৈঠক হওয়া উচিত
২. সকল মালিকের সম্মতিতে একটি অস্থায়ী কমিটি গঠন করাই উত্তম
৩. কেয়ারটেকার বা দারোয়ান নিয়োগ হলে তাদের কার্যপরিধি ও দায়িত্ব লিখিতভাবে নির্ধারণ করতে হবে
৪. খরচের হিসাব মাসে একবার লিখিতভাবে সবাইকে জানাতে হবে
ভবনের দায়িত্ব শুধু কারও নয়—যেখানে থাকেন, সেটা নিয়ে সবারই দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। নিয়ম না মানলে ভবিষ্যৎ হবে বিশৃঙ্খলার ঠিকানা।
💡 ফ্ল্যাটে শান্তি চাইলে মেইনটেন্যান্সেও চাই স্বচ্ছতা।
কে কবে টাকা নিল, কে কী করল—এসব ঝগড়ার আগেই গঠন করুন নিয়মিত সমিতি।
ফ্ল্যাট ক্রেতার গাইডলাইন ধারাবাহিকে পাচ্ছেন বাস্তব সমস্যা ও কার্যকর সমাধান।