Home আবহাওয়া চট্টগ্রামে বজ্রপাত: পাহাড়-সমতলে বাড়ছে প্রাণহানি

চট্টগ্রামে বজ্রপাত: পাহাড়-সমতলে বাড়ছে প্রাণহানি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম অঞ্চলে বজ্রপাতজনিত প্রাণহানি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উপকূলীয় এই জেলায় প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৭ জন, যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল রাঙামাটি সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা ও বাঁশখালী, সাতকানিয়া, পটিয়া এবং হাটহাজারীর খোলা চাষাবাদি অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষ।

কেন চট্টগ্রামে বজ্রপাত বাড়ছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বজ্রপাত বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে: পাহাড়ি এলাকা এবং উপকূলীয় মেঘমালার সংঘর্ষের কারণে বজ্রপাত বেশি হয়। নগরীর চারপাশে তাপদ্বীপ (heat island) তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে বন্দরনগরীর বাণিজ্যিক এলাকায়বন উজাড় ও পাহাড় কাটা যা বজ্রপাত রোধে গাছপালার প্রাকৃতিক ভূমিকা নষ্ট করছে। গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত আর্দ্রতা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা এই অঞ্চলের বজ্রগর্ভ মেঘের ঘনত্ব বাড়িয়ে তুলছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বজ্রপাত বৃদ্ধির জন্য এসব কারণ চিহ্নিত করেন বিশেষজ্ঞরা।

মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা: সাতকানিয়ার কৃষক আবু তৈয়ব জানান, “আমরা সকালবেলায় মাঠে যাই, কিন্তু হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে এলে দিশেহারা হয়ে যাই। একবার ঝড় শুরু হলে আর ফেরা যায় না।  আমি প্রতিবার কাজ শুরু করার আগে আকাশের দিকে তাকাই। কিন্তু তাতেও কি রক্ষা হয়?”

বিশেষজ্ঞদের অভিমত:আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বজ্রপাত বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। খরতাপের মাত্রা বাড়া, বাতাসে আর্দ্রতা এবং উচ্চমাত্রার জলীয়বাষ্প একত্রিত হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা একাধিক গবেষণায় দেখিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার বায়ুমণ্ডলে সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বজ্রপাত সৃষ্টির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করছে।

একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণায় আশঙ্কা করা হয়েছে, যদি বর্তমান বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ধারা বজায় থাকে, তাহলে আগামী দুই দশকে বাংলাদেশে বজ্রপাতের হার প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে প্রাণহানি আরও বাড়বে।

বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেছেন, বজ্রপাত প্রতিরোধে স্থানীয় জনগণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণ, উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি এবং আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাসে সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি।

ভারতের মহারাষ্ট্র ও বিহার রাজ্যে সম্প্রতি বজ্রপাত প্রতিরোধে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্র নির্গমন শনাক্তকারী যন্ত্র স্থাপন করে সফলতা পাওয়া গেছে। এমন প্রযুক্তি বাংলাদেশেও প্রয়োগের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে বজ্রপাত সম্পর্কিত শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদ দিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক বললেন, “বজ্রপাতের সময় জীবন বাঁচানোর মতো নিরাপদ আশ্রয় বা তাৎক্ষণিক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার সিস্টেম চট্টগ্রামে এখনো কার্যকর নয়। পাহাড়ি ও সমতল দুই এলাকায়ই এটি বড় দুর্বলতা।”

চট্টগ্রামের জন্য বিশেষভাবে বজ্রনিরোধক টাওয়ার স্থাপন, মোবাইলভিত্তিক সতর্কবার্তা সম্প্রসারণ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বজ্রপাতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে আশ্রয় ব্যবস্থার সুপারিশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।