Home কলকাতা নারকেল গাছে বজ্রপাত, মুহূর্তেই জ্বলল দাউ দাউ করে

নারকেল গাছে বজ্রপাত, মুহূর্তেই জ্বলল দাউ দাউ করে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কলকাতা: বীরভূমে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস জনজীবনের মাঝে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে নামে স্বস্তির বৃষ্টি। কিন্তু সেই স্বস্তির বৃষ্টিই পরিণত হয় আতঙ্কে, যখন বজ্রপাতের এক ভয়ংকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায়, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে লাভপুর থানার অন্তর্গত লাঘোষা গ্রামে একটি নারকেল গাছে বজ্রপাত হয় এবং মুহূর্তেই গাছটি দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলের দিকে হঠাৎ কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। সঙ্গে শুরু হয় প্রবল দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। ঝড়ের মাঝেই বিকট শব্দে বজ্রপাত ঘটে গ্রামের এক বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু নারকেল গাছে। বজ্রপাতের তীব্রতায় গাছের উপরাংশ ফেটে যায় এবং আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা গাছে। আশপাশে থাকা মানুষজন দৌড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যান।

লাঘোষা গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত রায় বলেন, “এত কাছ থেকে এমন ভয়ানক বজ্রপাত এর আগে কখনও দেখিনি। গাছটিতে যেভাবে আগুন লেগে গেল, মনে হচ্ছিল কেউ যেন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। পুরো গ্রামটাই কয়েক মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।”

এই ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে যাদের বাড়ির চারপাশে উঁচু গাছ রয়েছে, তারা এখন আরও সতর্ক হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বজ্রপাতের এমন ঘটনা বর্ষার আগমনের প্রাক্কালে স্বাভাবিক হলেও, বাড়ির আশেপাশে উঁচু গাছ থাকলে সাবধান থাকা জরুরি। বজ্রপাতের সময় বাড়ির ভেতর থাকা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করা এবং উঁচু গাছের নিচে না দাঁড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বীরভূম ছাড়াও রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলাতে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। হাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চলের ওপর তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত এবং বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পের প্রভাবে আগামী দু-একদিন বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

লাঘোষার এই ঘটনার পর অনেকেই মনে করছেন, বজ্রপাত প্রতিরোধে সরকারিভাবে সচেতনতামূলক প্রচার এবং গাছের উপরে বজ্রনিরোধক যন্ত্র বসানোর মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

নারকেল গাছে বজ্রপাত কেন হলো?

নারকেল গাছ সাধারণত:

অন্যান্য গাছের তুলনায় বেশি লম্বা হয়

মাথায় থাকে জলীয় তরলসমৃদ্ধ পাতার ঝোপ

নারকেল গাছের কাঠামো সাধারণত কিছুটা নমনীয় ও ভেজা থাকে, ফলে বিদ্যুৎ সহজে প্রবাহিত হতে পারে

এটি চারপাশে ফাঁকা জায়গায় থাকলে বজ্রপাত আকর্ষণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়

এই কারণে গাছটি হয়ে ওঠে ‘ন্যাচারাল লাইটনিং রড’, অর্থাৎ বজ্রপাতের বিদ্যুৎ discharge হওয়ার সহজ পথ। যে কোনো উঁচু, একাকী বা জলীয় পদার্থযুক্ত বস্তু বজ্রপাত বেশি আকর্ষণ করে।

গাছে আগুন লাগল কেন?

বজ্রপাতের সময়:

বিদ্যুৎ প্রবাহের তীব্র তাপমাত্রা ৩০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে

এই তাপমাত্রা গাছের অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা ও কোষকে তাৎক্ষণিকভাবে বাষ্পীভূত করে ফেলেগাছের কাণ্ডে দাহ্য পদার্থ থাকলে তা আগুনে রূপ নেয়

এ কারণেই বজ্রপাতের পর গাছে হঠাৎ আগুন ধরে যেতে পারে।

নারকেল গাছে বজ্রপাত কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়—এটি একটি প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যাত ঘটনাপ্রবাহ। বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও বর্ষার সন্ধিক্ষণে যখন আর্দ্রতা বেশি থাকে এবং বায়ুমণ্ডল অস্থির থাকে, তখন এই ধরনের বজ্রপাত আরও বেশি ঘটে।

এ কারণে উঁচু গাছের কাছাকাছি না থাকা, ঘরের ভিতর থাকা, ও বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।