বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সেবা খাতে চার্জ বাড়ছে। এই লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবিত ট্যারিফ কাঠামো পর্যালোচনায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করেছে আগামী সোমবার। বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চিটাগাং চেম্বারসহ বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিদের সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওইদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় সভা শুরু হবে। বন্দরের নতুন ট্যারিফ কাঠামো প্রস্তাব করেছে স্পেনভিত্তিক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান । তাদের প্রস্তাবিত এই ট্যারিফ কাঠামো নিয়ে সোমবারের সভা। -এই তথ্য জানিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা জানান, ট্যারিফ বাড়ানোর পর অনেক বছর অতীত হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাতে বন্দরের ব্যয় বেড়েছে প্রচুর। ট্যারিফ বৃদ্ধির বিষয়টি ঝুলে আছে অনেকদিন ধরে। আশা করা হচ্ছে এবার তা চূড়ান্ত হবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন ( বিএসএএ ) এর আগে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত ট্যারিফ কাঠামোর। তারা উল্লেখ করে যে এই নতুন চার্জ কাঠামো বর্তমান বাণিজ্যিক বাস্তবতা ও দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাদের বক্তব্য, এই ট্যারিফের কারণে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়িক খরচ ব্যাপকভাবে বাড়বে, যা দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিএসএএ উল্লেখ করেছে, নতুন ট্যারিফ প্রস্তাবে বন্দরে প্রবেশ ফি, পাইলটেজ চার্জ, লোডিং ও আনলোডিং চার্জসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফি’র হার প্রায় অর্ধেক থেকে দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, ১৮,১০২ জিটি ধারণক্ষমতার একটি জাহাজের বন্দরে প্রবেশ ফি বর্তমানে ৪,৩৬২ ডলা্ তা বাড়িয়ে ৬,৮৩৪ ডলারে নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫৬ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে । একইভাবে, পাইলটেজ চার্জের ক্ষেত্রে প্রায় ৯৬ শতাংশ এবং লোডিং/আনলোডিং চার্জের ক্ষেত্রে ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বাড়তি খরচ শিপিং এজেন্ট ও ব্যবসায়ীদের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএসএএ।
বিএসএ্রএ কর্তৃক আপত্তি জানিয়ে বন্দরকে দেয়া পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিপিএ বর্তমান সময়েও একচেটিয়া বাজারের মধ্যেই কাজ করছে যেখানে বন্দরের সুবিধা, অবকাঠামো, কর্মদক্ষতা ও আন্তর্জাতিক মানের সেবা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় চার্জ বৃদ্ধি যৌক্তিক নয় এবং এটি দেশের লজিস্টিক ও ট্রেড ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমিয়ে দেবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পোর্ট সার্ভিস চার্জ ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য বন্দরের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় এই নতুন হারে ব্যবসায়ীরা সংকটের মুখে পড়বেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
বিএসএএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ ইকবাল আলী বলেন, “একটি উন্নয়নশীল দেশে যেখানে জিডিপি বৃদ্ধি, রেল ও সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন, পোর্ট আধুনিকায়নসহ মৌলিক ভৌত অবকাঠামো এখনো ব্যাপক উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে, সেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে ট্যারিফ বাড়ানো ব্যবসাবান্ধব নয়। এটা ব্যবসার পরিবেশকে আরও কঠিন করবে এবং দেশের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।”
- বিএসএএ প্রতিবাদপত্রে ১৬ দফা সুপারিশ প্রদান করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- খালি কনটেইনারের জন্য স্টোরেজ চার্জ কমানো।
- ওয়াচম্যান বুকিং ফি-কে ট্যারিফ কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ।
- পুরনো এবং অকার্যকর জেটি ক্রেন চার্জ বাতিল করার দাবি।
- রেফার কনটেইনারের বিদ্যুৎ বিল কনসাইনি নয় বরং এজেন্টদের ওপর চাপানোর অনৈতিকতা দূর করার অনুরোধ।
- শিফটিং চার্জ নির্ধারণে যৌক্তিকতা ও দায়ভিত্তিক নীতি অনুসরণের পরামর্শ।
বিএসএএ সাফ জানিয়ে দেয় যে, নতুন ট্যারিফ কার্যকর করার আগে বন্দরকে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবার মান আন্তর্জাতিক মান অনুসারে উন্নত করতে হবে। যদি তা না হয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে এই ট্যারিফের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ ও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। এই অবস্থায় ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য উদ্বেগ বাড়ছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।