Home আন্তর্জাতিক ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় গুলি: নিউইয়র্কে প্রাণ দিলেন পুলিশ অফিসার দিদারুল

ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় গুলি: নিউইয়র্কে প্রাণ দিলেন পুলিশ অফিসার দিদারুল

মোস্তফা তারেক, নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনের প্রাণকেন্দ্রে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড। সোমবার সন্ধ্যায়, মধ্য টাউনের ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউতে এক উন্মত্ত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয়েছেন নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) অফিসার দিদারুল ইসলাম। বাংলাদেশি অভিবাসী এই পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন দুই সন্তানের পিতা এবং তার স্ত্রী বর্তমানে আট মাসের গর্ভবতী।

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস এক সংবাদ সম্মেলনে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেছিলেন, “দিদারুল নিউইয়র্কবাসীকে রক্ষা করছিলেন। একজন অভিবাসী হিসেবে এই শহরকে তিনি প্রাণ থেকে ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন একজন ধার্মিক মানুষ, সদা ন্যায়ের পথে চলতেন।”

৩৬ বছর বয়সী দিদারুল ইসলাম নিউইয়র্ক পুলিশের ৪৭তম প্রিসিন্কটে কর্মরত ছিলেন ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে। সোমবার তিনি ছুটিতে থাকলেও পার্ক অ্যাভিনিউয়ের ওই বহুতল ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে তার পরনে তখনও ছিল এনওয়াইপিডির ইউনিফর্ম। দায়িত্ব পালনের সময়ই জীবন দিতে হয় এই সাহসী অফিসারকে।

পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, “দিদারুল গুলিতে নিহত হন ঠাণ্ডা মাথার এক খুনির হাতে। তিনি প্রাণ দিয়েছেন কর্তব্যরত অবস্থায়, ইউনিফর্ম পরে। তিনি বেঁচেছিলেন নায়ক হিসেবে, মরেছেনও একজন সত্যিকারের নায়ক হয়ে।”

ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ২৮ মিনিটে গুলি ছোঁড়ার খবর আসে পুলিশ সদর দপ্তরে। ২৭ বছর বয়সী বন্দুকধারী শেন তামুরা একটি কালো বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে নামেন এবং একটি এম-৪ রাইফেল হাতে ভবনে প্রবেশ করেন। লবিতে ঢুকেই প্রথম গুলি করেন দিদারুল ইসলামের দিকে—মুহূর্তেই প্রাণ হারান তিনি। এরপর এক নারী, এক নিরাপত্তাকর্মী ও ভবনের ৩৩ তলায় আরও একজনকে গুলি করে হত্যা করেন তামুরা। একজন আহত হলেও তিনি আশঙ্কামুক্ত নন, রয়েছেন সংকটাপন্ন অবস্থায়।

৩৩ তলায় পৌঁছে তামুরা নিজেই নিজের বুকে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। পুলিশ নিশ্চিত করেছে, হামলাকারী একাই এই রক্তাক্ত তাণ্ডব চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থল নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দুর্ঘটনার সংবাদে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুরা।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নিহত দিদারুল ইসলাম প্রতিদিনই অতিরিক্ত কাজ করতেন, যাতে করে পরিবারের জন্য একটু বেশি উপার্জন করতে পারেন। তার এই আত্মত্যাগ শুধু একজন পুলিশ অফিসারের মৃত্যু নয়—এ যেন গোটা নিউইয়র্ক শহরের হৃদয়ে একটি গভীর ক্ষতচিহ্ন হয়ে রইল।

পুলিশের সংগঠন প্যাট্রোলম্যান্স বেনেভোলেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্যাট্রিক হেনড্রি বলেন, “এটা ছিল এক বিধ্বংসী রাত। দিদারুল ছিলেন এক নিষ্ঠাবান পেশাজীবী, যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল পরিবারকে রক্ষা করা এবং শহরের শান্তি বজায় রাখা।”

এই হত্যাকাণ্ড নিউইয়র্ক শহরের বুকে গভীর শোক ছড়িয়ে দিয়েছে। হাসপাতাল থেকে দিদারুল ইসলামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় অ্যাম্বুলেন্সে, যা দেখে উপস্থিতদের কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। ভবনের বাইরে পুলিশ সদস্যদের ভিড় আর তাদের নিশ্চুপ সম্মান প্রদর্শন ছিল যেন এক বেদনাবিধুর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

এই মুহূর্তে দিদারুল ইসলামের পরিবার শোকের সাগরে ভাসছে। স্ত্রীর গর্ভে নতুন প্রাণ, আর ঘরে অপেক্ষমাণ দুটি শিশু—তাদের জীবনে বাবার স্পর্শ থাকবে না আর কোনোদিন।

এই মৃত্যু শুধু এক পুলিশ অফিসারের নয়, এক স্বামীর, এক পিতার, এক অভিবাসী স্বপ্নবাজ মানুষের, যার জীবন শেষ হলো এক পাগলের গুলিতে।