আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সিঙ্গাপুরের এক নারীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ আট বছর ধরে চলা পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনায় সাবেক স্বামীসহ ছয়জনকে কঠোর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভয়াবহ এই ঘটনাটি সম্প্রতি আলোচনায় আসে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমস-এর একান্ত সাক্ষাৎকারে। ভুক্তভোগী নারী তার নিপীড়নের বিবরণ প্রকাশ করেন সাক্ষাৎকারে।
পূর্ব এশিয়ার এক দেশের নাগরিক ওই নারী ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন স্বামী কর্তৃক তার খাবারে দেয়া মাদক গ্রহণ করে অচেতন হয়ে পড়তেন। সেই সুযোগে চোখ বেঁধে তাকে ধর্ষণ করত একাধিক পুরুষ। যাদের অধিকাংশই তার স্বামীর পরিচিত। এই নির্মম ও সুপরিকল্পিত নিপীড়নের সময় ভিডিও ধারণ করা হতো এবং তা পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলের জন্য ব্যবহার করত চক্রটি।
পুলিশের তদন্তে ভয়াবহ তথ্য:
সিঙ্গাপুর পুলিশের Sexual Abuse and Child Protection Unit এর তদন্তে উঠে আসে বিস্তারিত তথ্য। জানা যায়, ভুক্তভোগীর সাবেক স্বামী (বর্তমানে বয়স ৪২) এককভাবে পুরো নির্যাতন পরিকল্পনার মূল হোতা ছিলেন। তার সহযোগিতায় মোট পাঁচজন পুরুষ (বয়স ৩৫ থেকে ৫০ বছর) বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণে অংশ নেন।
২০২০ সালে একদিন ড্রাগের মাত্রা কম হওয়ায় নারীটি আংশিকভাবে সচেতন অবস্থায় ধর্ষণের দৃশ্য অনুভব করেন। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে তিনি গোপনে পুলিশে অভিযোগ জানান।
ডিজিটাল ফরেনসিক ইউনিটের সহায়তায় পুলিশ মুছে ফেলা ভিডিওর বেশিরভাগই পুনরুদ্ধার করে। মেডিক্যাল পরীক্ষায় তার শরীরে মাদকের উপস্থিতি ও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের চিহ্ন পাওয়া যায়।
আদালতের রায়
গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুর হাইকোর্ট ৬ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে। সাবেক স্বামীকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি পাঁচজন ধর্ষণ ও অবৈধ ভিডিও তৈরির অপরাধে ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
ভুক্তভোগীর বক্তব্য
বর্তমানে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা ভুক্তভোগী নারী তার সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি বেঁচে আছি কেবল সন্তানদের কথা ভেবে। না হলে এতদিনে আত্মহত্যা করতাম। সাহস করে প্রতিবাদ না করলে হয়তো এখনো ওই বন্দিত্বে পড়ে থাকতাম।”
তিনি নারীদের উদ্দেশে বলেন, “কেউ এমন পরিস্থিতিতে থাকলে নীরব থাকবেন না। রিপোর্ট করুন। আমি প্রমাণ যে সত্যের জয় হয়।”
বিশেষজ্ঞদের মত
সাইকিয়াট্রিস্ট ড. লি হুই মিন বলেন, “এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি যৌন নির্যাতনভুক্ত নারীদের মধ্যে গভীর মানসিক আঘাত, ট্রাস্ট ইস্যু ও হতাশা জন্মায়। থেরাপি দীর্ঘমেয়াদি এবং জটিল হয়।”
আইনজীবী সারা ট্যান মন্তব্য করেন, “সিঙ্গাপুরে বৈবাহিক ধর্ষণের মামলা আইনি জটিলতায় পড়ে যায়। তবে ড্রাগ ও ডিজিটাল প্রমাণের কারণে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর সিঙ্গাপুরজুড়ে #StopMaritalAbuse ক্যাম্পেইন নতুন করে জোরদার হয়েছে। নারী অধিকার সংগঠন AWARE জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। সংগঠনটি আইনের আরও কঠোর সংস্কার দাবি করেছে।
👉 আপনিও যদি এমন কোনো নির্যাতনের শিকার হন, চুপ না থেকে সহায়তা চান। স্থানীয় প্রশাসন, নারী অধিকার সংগঠন বা বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব—সাহস করুন।
📢 সংবাদটি শেয়ার করুন, যাতে আরও মানুষ সচেতন হন এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারেন।
✍️ আপনার মতামত দিন—আপনি কি মনে করেন, সিঙ্গাপুরের মতো আমাদের দেশেও marital rape-কে কঠোরভাবে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা উচিৎ।