Home শিক্ষা শাবির ঘটনা বন্ধুর ছদ্মবেশে শত্রু: শিক্ষা কী?

শাবির ঘটনা বন্ধুর ছদ্মবেশে শত্রু: শিক্ষা কী?

বিশ্বাসঘাতকতার নির্মম পরিণতি: শাবির ঘটনাটি আমাদের সমাজের আয়না

সম্পাদকীয়


শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং তা এক গভীর সামাজিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিক হলো—এই পাশবিক ঘটনার নেপথ্যে ছিল ভুক্তভোগীর ‘বন্ধু’, যার বিশ্বাসঘাতকতায় উন্মোচিত হয়েছে আজকের সমাজে সম্পর্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তৃত অবিশ্বাস আর ভাঙনের রূপ।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত পাঁচজনের মধ্যে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে ওই ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলার ঘনিষ্ঠজন। প্রাথমিকভাবে ‘বিশ্বাস’ অর্জনের মাধ্যমে শিকার তৈরি করে পরবর্তীতে ‘অচেতন করে ধর্ষণ’—এ ধরনের অপরাধ কেবল জঘন্য নয়, এটি আমাদের আইন, নৈতিকতা ও মানবতাবোধের চরম অপমান।

বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় মুক্তচিন্তার চর্চাকেন্দ্র, সৃজনশীলতার লালনভূমি। অথচ সেখানে নিরাপত্তার প্রশ্নে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা প্রমাণ করে—আমরা কতটা পিছিয়ে রয়েছি নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষায়। সামাজিক বন্ধন, পারস্পরিক আস্থা ও শিক্ষা-সংস্কৃতির মাঝে যে গর্ত তৈরি হয়েছে, সেটির গভীরতা যদি এখনই উপলব্ধি না করি, তবে এমন ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’-এর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সমাজপতিরা এখন মুখোমুখি কঠিন এক প্রশ্নের—এই ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা কীভাবে রোধ করা যায়? শুধু আইনের কঠোর প্রয়োগ নয়, আমাদের দরকার শিক্ষার কাঠামোয় নৈতিকতা-চর্চাকে অন্তর্ভুক্ত করা, পরিবারে সন্তানদের মধ্যে মানবিকতা গড়ে তোলার পরিবেশ সৃষ্টি করা, এবং সামাজিকভাবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ঘৃণার প্রকাশ ঘটানো।

আমরা আশা করব, এই মামলায় কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। একইসঙ্গে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে অবিলম্বে।

বিশ্বাসের মুখোশে যারা বর্বরতা লুকিয়ে রাখে, তারা সমাজের কলঙ্ক। তাদের বিচারের মধ্য দিয়েই সমাজে আবার আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।