বন্যপ্রাণী রক্ষায় কঠোরতম আইন আসছে
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কঠোরতম পদক্ষেপ নিতে চলেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়ায় বাঘ ও হাতির মতো মহাবিপন্ন প্রাণী হত্যার দণ্ডকে যুগান্তকারীভাবে কঠোর করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে, বাঘ বা হাতি হত্যার মতো গুরুতর অপরাধের পুনরাবৃত্তিতে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান থাকছে।
বর্তমানে প্রচলিত বন্যপ্রাণী আইন, ২০১২-কে হালনাগাদ করে এই নতুন অধ্যাদেশটি প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়াটির বিষয়ে জনমত নেয়া হয়েছে।
বাঘ-হাতি হত্যার ক্ষেত্রে কঠোরতম শাস্তি (ধারা ৩৮)
অধ্যাদেশের নবম অধ্যায়ে অপরাধ, জরিমানা ও দণ্ড সংক্রান্ত বিধানগুলো পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি কঠোর করা হয়েছে। বিশেষ করে বাঘ (তফসিল ১(ক)-এ উল্লিখিত) এবং হাতির মতো প্রাণী হত্যার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ উভয় দণ্ডই বাড়ানো হয়েছে:
| অপরাধের বিবরণ (অনুচ্ছেদ ৩৮) | দণ্ডের বিধান |
| তফসিল ১(ক)-এ উল্লিখিত বাঘ বা হাতি হত্যা (শিকার) | সর্বনিম্ন ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ১ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড। |
| একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে | সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড। |
| পারমিট ছাড়া বাঘ বা হাতির ট্রফি, মাংস বা দেহাংশ সংগ্রহ বা দখল | সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। পুনরাবৃত্তিতে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড। |
এই কঠোর বিধান স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, সরকার সুন্দরবনের বাঘ এবং দেশের বনাঞ্চলে হাতির সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বন্যপ্রাণী রক্ষায় অন্যান্য কঠোর বিধান
বাঘ-হাতি হত্যা ছাড়াও নতুন অধ্যাদেশে অন্যান্য গুরুতর অপরাধের দণ্ডও বাড়ানো হয়েছে:
অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যান লঙ্ঘন: অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যানের বিধি-নিষেধ (অনুচ্ছেদ ১৯) লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
বন্যপ্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ: বন্যপ্রাণীকে প্রহার, উত্ত্যক্ত করা, অপ্রয়োজনে আটকে রাখা, বিদ্যুৎপৃষ্ট করে হত্যা করা বা মাত্রাতিরিক্ত ভার বহন করানোর মতো ‘নিষ্ঠুর আচরণ’ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
অবৈধ দখল ও কেনা-বেচা: লাইসেন্স বা পারমিট ছাড়া বন্যপ্রাণী, এর দেহাংশ, ট্রফি বা বনজদ্রব্য (অনুচ্ছেদ ১০, ২৮ ও ৩৩) দখলে রাখলে, ক্রয়-বিক্রয় বা পরিবহন করলে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে। পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড।
সংরক্ষণে নতুন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
অধ্যাদেশে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি সংরক্ষণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে:
বন্যপ্রাণী ট্রাস্ট ফান্ড: ‘বন্যপ্রাণী ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করা হবে, যার অর্থ বন্যপ্রাণীর উদ্ধার, শুশ্রুষা, পুনর্বাসন ও সংরক্ষণের কাজে ব্যয় হবে।
বন্যপ্রাণী উইং: বন অধিদপ্তরের অধীনে ‘বন্যপ্রাণী উইং’ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
করিডোর ও জোনিং: ‘করিডোর’, ‘কোর জোন’ এবং ‘বাফার জোন’-এর মতো বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলো আইনে যুক্ত করে বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বিচরণ পথ ও আবাসস্থল নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নতুন এই অধ্যাদেশটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সরকারের সদিচ্ছা এবং অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, কঠোর দণ্ডবিধি এবং আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে।










