বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর পুরান ঢাকায় আরমানিটোলা এলাকায় টিউশনি দিতে যাওয়ার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবায়েদ হোসাইনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পানির পাম্প গলি থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার অনুসন্ধানে নিহতের ওই ছাত্রী বর্ষা আক্তারকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রোববার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বর্ষাকে তার নিজ বাসা (বংশাল, নূর বক্স রোড, রৌশান ভিলা) থেকে আটক করা হয়। বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তদন্তে ব্যবহারের জন্য সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ চলছে।
ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জুবায়েদ টিউশনি দিতে ওই বাসার সিঁড়িতে ওঠার সময় ছুরিকাঘাতের শিকার হন। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিডফোর্ট হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে। বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ঘটনার বিষয়ে বলছেন, “জুবায়েদ হোসাইনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। যে কেউ জড়িত থাকুক—কাউকেই ছাড় দেবো না।”
লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, “প্রাথমিকভাবে ছাত্রীকে আটক করা হয়েছে এবং বাড়ির অন্য সদস্যদেরও হেফাজতে রাখা হয়েছে। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যেই আমরা দুইজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের আটকের জন্য আমাদের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদেরকেও আটক করতে সক্ষম হব।” তিনি বর্তমানে এই ঘটনার বিষয়ে এই পর্যন্তই মন্তব্য করতে বলেছেন।
খবর পেয়ে ঘটনার স্থলে ছুটে আসে জুবায়েদের সহপাঠী ও বন্ধুরা। তারা জানান, সন্ধ্যায় সিঁড়িতে ও আশেপাশে প্রচুর রক্তের দাগ ছিল; তিলোত্তমার মতো জনবহুল এলাকায় এমন নিস্তব্ধ ও বর্বর হত্যা দেখে সবাই স্তম্ভিত। নিহত জুবায়েদ কুমিল্লার বাসিন্দা; পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
বন্ধুরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। তারা বলেন, “ওই বাসায় যারা বাস করে বা যারা টিউশনি গ্রহণ করত—তাদের সবকেই আইনের আওতায় আনা হোক। যদি রাষ্ট্র বিচার না করতে পারে, আমরা আমাদের পন্থায় বিচার নিশ্চিত করবো।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজাম্মুল হক ঘটনাস্থলে এসে বলেন, “ঘটনা জানামাত্রই আমি ও অন্যান্যরা এসেছি। পুলিশ কাজ করছে; সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহের অনুরোধ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র আমাদের সন্তান—এই হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”
স্থানীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ ও পিবিআই প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ করেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ঘটনাস্থলে কাজ করেছে। তদন্তকারীরা আশাপ্রকাশ করছেন দ্রুত ঘটনার পরিস্কার চিত্র পাওয়া যাবে এবং দোষীদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।
ঘটনাস্থল ও আটক হওয়া ছাত্রীর সম্পর্কে তদন্ত-মুখী তথ্যসমূহ বিস্তারিতভাবে যাচাই করছে পুলিশ; তদন্তে নতুন কোনো তথ্য প্রকাশ করলেই পরবর্তী পর্যায়ে তা জানানো হবে।