বলিউডের অন্ধকার পাতা
বিনোদন ডেস্ক: ২০১৮ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের হলিউডে হার্ভে ওয়াইনস্টিন কেলেঙ্কারির পর বিশ্বজুড়ে যখন #MeToo আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, ভারতও তার প্রভাব এড়াতে পারেনি। আর বলিউড ছিল এই ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দুতে।চিরকাল গ্ল্যামারের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বলিউডের কাস্টিং কাউচ, লাঞ্ছনা, যৌন হেনস্তা ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রথমবারের মতো গণভোটের রূপ নেয় সামাজিক মাধ্যমে। বহু নারী শিল্পী সাহস করে মুখ খোলেন। নাম উঠে আসে একের পর এক তারকা, নির্মাতা ও কোরিওগ্রাফারের।
১. নানা পাটেকর ও তনুশ্রী দত্ত
এই আন্দোলনের বলিউডে শুরু হয় সাবেক মিস ইন্ডিয়া ও অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত-র অভিযোগ থেকে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ সিনেমার সেটে নানা পাটেকর তাকে যৌনভাবে হেনস্তা করেছিলেন এবং কেউ তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি।
দশ বছর পর সেই পুরনো ঘটনা নতুনভাবে সামনে এনে তনুশ্রী বলেন, “আমি চুপ ছিলাম, কারণ কেউ শুনতে চায়নি।” এরপর শুরু হয় ‘মিটু’র ঢেউ।
২. সাজিদ খান
পরিচালক সাজিদ খান-এর বিরুদ্ধে একাধিক নারী উঠিয়ে আনেন অশালীন মন্তব্য, নগ্ন হয়ে অডিশন নেওয়ার চাহিদা, জোর করে শরীর ছোঁয়ার চেষ্টা-র মতো গুরুতর অভিযোগ। অভিনেত্রী সালোনি চোপড়া, র্যাচেল হোয়াইটসহ অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন।
পরিণতিতে সাজিদ খান ‘হাউজফুল ৪’ পরিচালনা থেকে বাদ পড়েন এবং কিছুদিনের জন্য ইন্ডাস্ট্রি থেকে একঘরে হয়ে যান। যদিও পরবর্তীতে তিনি আবার মিডিয়ায় ফেরেন, যা নিয়েও সমালোচনা হয়।
৩. বিকাশ বহেল
‘কুইন’ সিনেমার পরিচালক বিকাশ বহেল-এর বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্তার অভিযোগ ওঠে। এক নারী সহকর্মী বলেন, “তিনি আমার সম্মতি ছাড়াই জোর করে আমার গায়ে হাত দেন।” এই অভিযোগের পর ফ্যান্টম ফিল্মস প্রযোজনা সংস্থা ভেঙে যায়, যেটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ, বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে ও মধু মানেনা।
৪. আলোকনন্দা দাশগুপ্ত ও অন্যান্য সাহসী কণ্ঠ
প্রখ্যাত স্ক্রিপ্টরাইটার আলোকনন্দা, কোরিওগ্রাফার গীতা কাপুরসহ আরও বহু নারী তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। কেউ কেউ নামোল্লেখ করেন, কেউ করেন না। কিন্তু এক জিনিস স্পষ্ট হয়—বলিউডে বহুদিন ধরে যৌন হয়রানি, মানসিক নিপীড়ন ও শোষণ চলেছে, যা পর্দার আলোয় আসেনি।
৫. মিডিয়া, দর্শক ও ইন্ডাস্ট্রির প্রতিক্রিয়া
মিটু আন্দোলন নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। কেউ বলেছে “সাহসী উদ্যোগ”, কেউ বলেছে “পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নয়।” কিছু পুরুষ তারকা স্পষ্ট অবস্থান নেন (যেমন আমির খান), কেউ আবার কৌশলে এড়িয়ে যান।
তবে সবচেয়ে করুণ ছিল—অনেক নারী অভিযোগ আনার পরেও আইনি বা ক্যারিয়ারগত সুবিচার পাননি। বরং তারা হয়তো কাজ হারিয়েছেন, মিডিয়ার নজরবন্দি হয়েছেন।
📣 মতামত দিন
আপনার মতে, ‘মিটু’ আন্দোলন বলিউডে সত্যিকারের পরিবর্তন এনেছে কি? নাকি এটি ছিল ক্ষণস্থায়ী আলোড়ন মাত্র?