Home বিনোদন জুনিয়র তারকারা বড় হয়ে হারিয়ে গেলেন কেন?

জুনিয়র তারকারা বড় হয়ে হারিয়ে গেলেন কেন?

আমিরুল মোমেনিন: তারা ছিল বলিউডের পর্দাজুড়ে হেসে ওঠা ছোট্ট মুখ। ক্যামেরার সামনে সংলাপ বলত সাবলীলভাবে, দর্শক ভালোবাসায় ভরিয়ে দিত, কিন্তু সেই খুদে তারকাদের বাস্তব জীবন অনেক সময়েই ছিল গভীর এক শূন্যতা, শোষণ ও মানসিক যন্ত্রণায় ভরা

বলিউডে বহু শিশু অভিনয়শিল্পীর জীবন কেটেছে অসহনীয় মানসিক চাপ, আর্থিক শোষণ ও আত্মপরিচয়ের সংকটে। শৈশবে তারকা, বড় হয়ে ভুলে যাওয়া নাম—এই নিয়তি বহু চাইল্ড স্টারই মেনে নিতে পারেননি।

১. জুনিয়র মেহমুদ – তারকা থেকে বিস্মৃত এক নাম

ষাট ও সত্তরের দশকের জনপ্রিয় শিশুশিল্পী জুনিয়র মেহমুদ ছিলেন বহু সিনেমার প্রাণ। রাজেশ খান্না থেকে শশী কাপুর—সব বড় নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাঁর জন্য বলিউডে জায়গা ছিল না।

একসময় মঞ্চে পারফর্ম করে বেঁচে থাকলেও, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলো ফিকে হয়ে যায়। শেষজীবন কাটে গোপন যন্ত্রণায়।

২. জুগল হংসরাজ – ম্যাসাকার পর মানসিক অবসাদ

‘মাসুম’ সিনেমার সেই দৃষ্টিনন্দন শিশুশিল্পী জুগল হংসরাজ অনেকের মন জয় করেছিলেন। পরে তিনি অভিনয় চালিয়ে গেলেও, জনপ্রিয়তা আর ফিরে আসেনি।
অভিনেতা থেকে নির্মাতা হয়ে ‘পেয়ার impossible’ পরিচালনা করলেও সাফল্য পাননি।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “তারকা শিশুর জীবন মানে প্রশংসা, কিন্তু সেই প্রশংসা চলে গেলে এক অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরে।”

৩. উর্মিলা মাতণ্ডকর – পর্দার পেছনের ভয়

‘মাসুম’, ‘কর্মা’-র শিশুশিল্পী উর্মিলা বড় হয়ে সফল অভিনেত্রী হলেও একবার বলেন, “শৈশবে অনেকসময় এমন দৃশ্য করতে হয়েছে, যার মানে বুঝিনি। শুধু পরিচালক বলেছে, তাই করেছি। ভয় পেয়েছি, মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।”

তিনি মনে করিয়ে দেন, বলিউডে শিশুদের জন্য কোনো সুরক্ষা নীতির অভাব রয়েছে—যা এখনও অনেকাংশে বিদ্যমান।

৪. শ্বেতা বসু প্রসাদ – গড়পরতা জীবন ও স্ক্যান্ডালের ছায়া

‘মকড়ি’ সিনেমার জাতীয় পুরস্কারজয়ী চাইল্ড আর্টিস্ট শ্বেতা বসু প্রসাদ একসময় মাদক ও স্ক্যান্ডালের জালে জড়িয়ে সংবাদে আসেন।
যদিও পরবর্তীতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, কিন্তু মিডিয়ার আগুনে তিনি বহুদিন পুড়েছেন।
তিনি নিজেই বলেন, “শিশু তারকাদের মনোবিকাশ, নিরাপত্তা ও শিক্ষা নিয়ে কেউ ভাবে না।”

৫. হারিয়ে যাওয়া পরিচয়, পরিবার ও বন্ধুত্ব

চাইল্ড স্টারদের বেশিরভাগ সময় কাটে সেটে, স্কুল নয়। তারা শিখে যায় চেহারায় হাসি আটকে রাখতে, সংলাপে আবেগ রাখতে—কিন্তু হারায় স্বাভাবিক শৈশব, খেলার মাঠ, বন্ধুত্ব আর সাধারণ জীবনের আনন্দ।
মাঝে অনেকেই মাদক, বিষণ্নতা বা আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়েন

ভারতে শিশু তারকাদের জন্য আইনি সুরক্ষা থাকলেও বাস্তব প্রয়োগ এখনও দুর্বল। মা-বাবার অতিরিক্ত প্রত্যাশা, নির্মাতার বাণিজ্যিক লোভ ও দর্শকের তাড়না—সব মিলিয়ে শিশুরা হয়ে ওঠে এক ‘পণ্য’, যাদের মানবিক দিকটা ভুলে যাওয়া হয়।

📣 মতামত দিন, শেয়ার করুন

আপনার মতে, শিশুশিল্পীদের জন্য বলিউডে কী ধরনের নিরাপত্তা ও মানসিক সহায়তা দরকার? তারা কি শুধুই বিনোদনের মাধ্যম, নাকি আমাদের যত্নের দাবিদার?