অনেক দূরের এক গ্রামে ছিল এক কিশোরী, নাম তার পদ্মা। তার চোখ ছিল জলের মতো স্বচ্ছ, আর গলার সুরে ছিল বাঁশির মায়া। প্রতিদিন সকালে সে যেত নদীর ধারে মাটি ছুঁয়ে বলত, “তুই আমার দিদি, নদী! আমাকে ছুঁয়ে যাস, আমি থাকব তোকে আগলে।”
কিন্তু সেই গ্রামে ছিল এক নিষ্ঠুর জমিদার। তিনি গ্রামে এক নতুন বাঁধ দিতে চাইলেন, যাতে নদীর গতি বদলে যায়—কারণ নদী কেটে চলত তার জমির একপাশ দিয়ে। নদীর স্রোত ছিল তার ব্যবসার ‘বাধা’।
একদিন গভীর রাতে জমিদারের লোকজন এসে মাটি কেটে বাঁধ বসাতে শুরু করে। সে সময় পদ্মা ছুটে যায় নদীর ধারে। চোখে জল, কণ্ঠে কাঁপুনি নিয়ে সে বলে, “এই নদী শুধু জল নয়, সে প্রাণ! তুমি যদি থেমে যাও, আমিও বাঁচব না।”
সে কথা যেন শুনেছিল প্রকৃতি নিজেই। প্রবল ঝড় ওঠে। বজ্রপাতের শব্দে ভেঙে পড়ে বাঁধ। আর সেই রাতে পদ্মা হারিয়ে যায় নদীর জলে।
পরদিন সকালে দেখা যায়, বাঁধ নেই—কিন্তু নদীর মাঝখানে ফুটে আছে এক বিরল পদ্মফুল। সে ফুল থেকে ঝরে পড়ছে শিশিরের মতো কণ্ঠস্বর: “আমি পদ্মা, আমি নদীর বোন, আমি রক্ষা করব এ স্রোত চিরকাল।”
গ্রামের মানুষ এখনো বলে, নদী যতবার কান্নার মতো কলকল শব্দ করে, ততবারই যেন পদ্মার আত্মা কথা বলে। পদ্মফুল ফুটলে তারা বলে “পরি এসেছে নদীর বুকে।”
📜 গল্পের মূলভাব:
প্রকৃতি, জলধারা ও মানুষের হৃদয়ের আত্মিক সম্পর্ক কখনোই ব্যবসায়িক লোভে থেমে যায় না। আত্মত্যাগ হয়তো ব্যক্তিকে হারায়, কিন্তু রূপ দেয় অমর কাহিনিতে।