Home কলকাতা পশ্চিমবঙ্গে বাবরি মসজিদ: হুমায়ুনের ডাকে টাকার পাহাড়

পশ্চিমবঙ্গে বাবরি মসজিদ: হুমায়ুনের ডাকে টাকার পাহাড়

ছবি: এআই

সেই টাকা গুনতে মেশিন, ২৫-৩০ জনের শিফটিং ডিউটি

কৃষ্ণা বসু, কলকাতা: মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় অযোধ্যার বাবরি মসজিদের আদলে মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে শোরগোল পড়ে গেছে। ভরতপুরের বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সদ্য সাসপেন্ড হওয়া হুমায়ুন কবীরের এই ‘স্বপ্নের প্রকল্পে’ অভাবনীয় সাড়া মিলেছে। শিলান্যাস উপলক্ষ্যে দেশ-বিদেশের অনুদানে জমে উঠেছে টাকার পাহাড়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেই টাকা গুনতে রীতিমতো মেশিন বসাতে হয়েছে এবং ২৫-৩০ জন লোককে শিফটিং ডিউটিতে নিয়োগ করতে হয়েছে।

টাকার পাহাড় ও গণনা বিভ্রাট
সূত্রের খবর, কয়েকশো কোটি টাকা বাজেটের এই প্রকল্পের ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। সোমবার শিলান্যাস অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দানবাক্সে এবং সরাসরি অনুদান হিসেবে আসা টাকার পরিমাণ দেখে আয়োজকদের চক্ষু চড়কগাছ। টাকা গোনার জন্য একটি বিশেষ ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে, যেখানে সোমবার সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পর্যন্ত চলেছে গণনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নোট গোনার মেশিন দিয়েও কূল-কিনারা করা যাচ্ছে না। তাই স্থানীয় বিশ্বাসযোগ্য ২৫ থেকে ৩০ জন ব্যক্তিকে পালা করে বা ‘শিফটিং ডিউটি’তে টাকা গোনার কাজে লাগানো হয়েছে। অনুদানের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টাকা ভর্তি ঘরের বাইরে বসানো হয়েছে কড়া পাহারা, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। এই বিপুল অর্থ এবং গণনা প্রক্রিয়া দেখতে উৎসুক জনতাও ভিড় জমিয়েছেন।

হুমায়ুন কবীরের জেদ ও রাজনৈতিক সমীকরণ
কিছুদিন আগেই দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) হন হুমায়ুন কবীর। এরপরই তিনি ঘোষণা করেন, অযোধ্যায় যা হয়েছে তার প্রতিবাদে এবং মুসলিম আবেগকে সম্মান জানাতে তিনি মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের আদলে একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করবেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, দল থেকে দূরত্বের পর এটি হুমায়ুন কবীরের শক্তি প্রদর্শনের এক বড় হাতিয়ার।

হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, এই মসজিদ নির্মাণে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হবে এবং তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসবেন। বাস্তবেও তাই ঘটেছে। শুধু মুর্শিদাবাদ বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভিন রাজ্য এবং বিদেশ থেকেও বহু শিল্পপতি ও সাধারণ মানুষ কোটি কোটি টাকা অনুদান পাঠাতে শুরু করেছেন।

জনগণের আবেগ ও ভিড়
বেলডাঙার কাজিপাড়ায় আয়োজিত এই শিলান্যাস অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মসজিদ নির্মাণের আবেগে ভাসছে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। হুমায়ুন কবীরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ তাদের সাধ্যমতো দান করছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, বাবরি মসজিদ ইস্যুটি ভারতীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। হুমায়ুন কবীর এই ইস্যুটিকে কাজে লাগিয়ে এবং মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে নিজের রাজনৈতিক জমিকে নতুন করে শক্ত করতে চাইছেন। টাকার এই পাহাড় এবং মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করছে যে, সাসপেন্ড হলেও জনসমর্থনে তিনি এখনো পিছিয়ে নেই।

আপাতত সবার নজর বেলডাঙার এই নির্মীয়মান মসজিদের দিকে, যা আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতির অন্যতম চর্চার বিষয় হতে চলেছে।