Home পরিবেশ ঝালকাঠিতে শতাধিক বাবুই পাখির বাসা ও ছানা ধ্বংস: দুই মামলা

ঝালকাঠিতে শতাধিক বাবুই পাখির বাসা ও ছানা ধ্বংস: দুই মামলা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঝালকাঠি: ঝালকাঠি সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন এলাকায় একটি তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুই পাখির বাসা ও ছানা ধ্বংসের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পরিবেশবাদীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এই নির্মম ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে। গুয়াটন গ্রামের পাশে সরকারি সড়কের ধারে অবস্থিত একটি বিশাল তালগাছ, যেখানে বহু বছর ধরে বাবুই পাখির শতাধিক বাসা ছিল, সেটি কেটে ফেলা হয়। গাছটি স্থানীয় মোবারক আলী ফকিরের জমির পাশে অবস্থিত ছিল। তিনি তা মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। মিজানুর গাছটি কাটার কাজে ফারুক হোসেনকে সহায়তায় নেন।

স্থানীয়রা জানান, গাছটি কাটা হলে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা মাটিতে পড়ে যায়, ডিম ভেঙে যায় এবং প্রায় শতাধিক ছানা মারা যায়। এ দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমান সরকারি জায়গায় গাছ কাটার অভিযোগে থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় মোবারক আলী, মিজানুর রহমান ও ফারুক হোসেনকে আসামি করা হয়। পরে বন বিভাগ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুসারে আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করে।

ঝালকাঠি ডিবি পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একদল চৌকস পুলিশ সন্ধ্যার দিকে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলা থেকে প্রধান আসামি মোবারক আলী ফকিরকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ঝালকাঠির মৃত মোসলেম আলী ফকিরের পুত্র।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুর রহমান জানান, “তালগাছ কেটে বাবুই পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করায় ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা এবং পরিবেশ আইনে বন বিভাগ আলাদা একটি মামলা দায়ের করেছে।”

বন বিভাগের বরিশালের উপ বন সংরক্ষক মো. কবির হোসেন পাটোয়ারী বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে আমরা ঘটনাটির সত্যতা পাই। এটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের চরম লঙ্ঘন। তাই আমরা আদালতে মামলা করেছি।”

স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই গাছটি শুধু একটি তালগাছ নয়, ছিল জীববৈচিত্র্যের কেন্দ্র। যারা এটি ধ্বংস করেছে, তারা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।”

সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, “মামলার একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অপর দুজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।”

এই ঘটনায় পুরো এলাকায় পরিবেশগত সচেতনতার নতুন আলোচনার জন্ম হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাটি শুধু একটি গাছ কাটার বিষয় নয়, এটি একটি জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের জঘন্য দৃষ্টান্ত। বাবুই পাখির বাসা সাধারণত তাল, খেজুর বা খড়ই গাছে তৈরি হয় এবং একবার বাসা তৈরি হলে সেই গাছটি পাখিদের বহু প্রজন্মের আবাসস্থল হয়ে ওঠে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড উভয়ই।