বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির অন্তর্গত ১৮টি ইউনিটে সদ্যঘোষিত কমিটি বাতিল করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন একাংশের বঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা। রোববার দুপুরে শহরের কাজির পয়েন্ট এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। নেতৃত্বে ছিলেন সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মঈনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সদ্যঘোষিত কমিটিগুলোর অধিকাংশই ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে গঠিত হয়েছে। এতে স্থান পেয়েছেন বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত, এমনকি চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং স্বৈরাচারী শাসনের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরাও। এই সিদ্ধান্তে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মঈনুল হক বলেন, “বিগত ১৬ বছরে যারা জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেও দলের পতাকা ধরে রেখেছেন, তারা আজ পদবঞ্চিত। অথচ যারা দলের বাইরে ছিলেন, বা সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিত, তারা জায়গা পেয়েছেন পকেট কমিটিতে। এমন অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। আমরা তাই তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে নতুন কমিটি ঘোষণা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এই বিষয়টি ইতিমধ্যে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনে মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও এই অনিয়ম ও আপসকামী রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ জেপি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আ স ম খালিদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নোমান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রায়হান উদ্দিন, আহবায়ক কমিটির সদস্য আবুল মনসুর শওকত ও সেলিম উদ্দিন আহমদ।
অন্যদিকে, সদ্য ঘোষিত কমিটির পক্ষে সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফারুক আহমেদ লিলু মিয়া পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেছি। কেউ বাদ পড়লে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সময় তাদের বিবেচনা করা হবে। সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা কমিটি গঠনের যে কাজটি হয়েছে তা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্রবিরোধী।”
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব পদমর্যাদার সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল হক বলেন, “জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সদর ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমাদের নির্দেশ ছিল—কোনোভাবেই সন্ত্রাসী বা ফ্যাসিবাদীদের স্থান দেওয়া যাবে না। যদি কোথাও ভুল হয়ে থাকে, খতিয়ে দেখা হবে।”
জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট কলিমউদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, “পাল্টা কমিটি গঠনের বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে সংগঠনের বাইরে গিয়ে এ ধরনের কমিটি ঘোষণার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
দলীয় ভাঙনের এই প্রকাশ্য রূপ স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনকেই সামনে এনে দিয়েছে। তৃণমূল কর্মীদের মাঝে বিভাজনের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।