আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যের ব্রেন্ট শহরে একটি ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শিশু ধর্ষণ, মানব পাচার ও বিকৃত যৌন নির্যাতনের চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিন ব্যক্তিকে, যাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে চরম অপরাধমূলক অভিযোগ।
বিব কাউন্টি শেরিফ অফিস জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন উইলিয়াম চেজ ম্যাকএলরয় (২১), ডালটন টেরেল (২১) এবং আন্দ্রেস ভেলাজকেজ-ত্রেহো (২৯)। তাদের বাড়ির আশপাশেই অবস্থিত এক বাঙ্কারকে ব্যবহার করা হতো নির্যাতনের স্থান হিসেবে। এ বাঙ্কারটি বাইরে থেকে সাধারণ ঝড় আশ্রয়কেন্দ্র বলে মনে হলেও, ভিতরে চলত এক ভয়াবহ মানবতা বিরোধী কার্যক্রম।
তদন্ত শুরু হয় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে স্থানীয় সময় শনিবার পুলিশের এক ঘোষণায় এই তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং অভিযুক্ত করার কথা জানানো হয়।
ম্যাকএলরয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চারটি, মানব পাচারের ছয়টি, বিকৃত যৌন নির্যাতনের ছয়টি এবং অপহরণের চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। টেরেলের বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ষণের ছয়টি, বিকৃত যৌন নির্যাতনের ১২টি এবং মানব পাচারের পাঁচটি অভিযোগ। ভেলাজকেজ-ত্রেহোর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে মানব পাচারের ছয়টি অভিযোগ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এএল ডটকম এর তথ্য অনুসারে, অভিযুক্তরা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিশুদের অপহরণ ও নির্যাতন করে। ভুক্তভোগীদের বয়স ছিল মাত্র ৩ থেকে ১০ বছরের মধ্যে।
ম্যাকএলরয় ও টেরেল তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে ভেলাজকেজ-ত্রেহো শিশুদের নগ্ন ছবি তুলে তা বিক্রি করত এবং পরে নিজেই তাদের পাচার করত বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শিশুদের মাদক দিয়ে অচেতন করে বাঙ্কারে নিয়ে যাওয়া হতো, যা ছিল তাদের বসতঘরের কাছেই অবস্থিত। কীভাবে তিনজন একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে, তারা সবাই এক মাইলের মধ্যে তিনটি ভিন্ন ট্রেলারে বসবাস করত।
আলাবামার চতুর্থ সার্কিটের জেলা অ্যাটর্নি রবার্ট টার্নার জুনিয়র বলেছেন, “এটি আমাদের অফিসের ইতিহাসে অন্যতম জটিল এবং বেদনাদায়ক তদন্ত। এই অপরাধগুলো নিষ্ঠুর এবং অসহনীয়।” তিনি আরও জানান, “এই ঘটনার সঙ্গে আরও ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি, অচিরেই আরও গ্রেপ্তার হতে পারে।”
সহকারী জেলা অ্যাটর্নি ব্রায়ান জোনস বলেন, “শিশুরা নিরপরাধ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে সুরক্ষা প্রত্যাশা করে। যারা এই বিশ্বাসকে ভেঙে তাদের কষ্ট দেয়, তারা মানবতার শত্রু।”
এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারাও সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। প্রতিবেশী মিস্টি কোলবার্ন বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জেল তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। শিশুরা যে কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছে, তার তুলনায় কোনো শাস্তিই যথার্থ হতে পারে না।”
বিব কাউন্টির শেরিফ ওয়েড এক বিবৃতিতে বলেন, “এ ধরনের বিকৃত ও ঘৃণ্য আচরণ কখনোই বরদাস্ত করা হবে না এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”