বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, আগরতলা ( ত্রিপুরা ): ত্রিপুরার রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে আদিবাসী স্বায়ত্তশাসন, নাগরিকত্ব ও অনিবাসী ইস্যুকে ঘিরে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও কেন্দ্রীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়ে জনসমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা করছে। তবে বিরোধী শিবির বিশেষ করে TIPRA Motha ক্রমেই চাপ বাড়াচ্ছে, যা ভবিষ্যতে জোট রাজনীতিতে বড় ধরণের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
TIPRA Motha’র প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মন সম্প্রতি প্রকাশ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন, ২০২৪ সালে স্বাক্ষরিত Tiprasa Accord বাস্তবায়নে গড়িমসি হলে তারা বিজেপির সঙ্গে জোট থেকে সরে দাঁড়াবেন। তার দাবি, এই চুক্তির মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের জনগণের স্বার্থে চুক্তি করেছি, যদি তা বাস্তবায়িত না হয়, তবে জোটে থাকার কোনো মানে হয় না।”
অন্যদিকে, Motha নেতারা আরও কিছু স্পষ্ট দাবি তুলেছেন—রাজ্যে ইননার লাইন পারমিট (ILP) ব্যবস্থা চালু করা, অনুপ্রবেশ রোধে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (NRC) বাস্তবায়ন এবং ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াজ অটোনমাস ডিসট্রিক্ট কাউন্সিলে (TTAADC) পূর্ণ ক্ষমতা নিশ্চিত করা। তাদের অভিযোগ, সরকার শুধু সময়ক্ষেপণ করছে, অথচ পাহাড়ি এলাকায় মানুষ জমি হারাচ্ছে, সাংস্কৃতিক পরিচয় সংকটে পড়ছে।
এই অবস্থায় বিজেপি নেতৃত্ব উন্নয়নকে সামনে রেখে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। মুখ্যমন্ত্রী মণিক সাহা বিভিন্ন সভায় দাবি করছেন, রাজ্যের সর্বস্তরে শান্তি ও উন্নয়ন শুধু বিজেপির হাতেই সম্ভব। তিনি সম্প্রতি ২০০ পরিবারের ৬১০ জন ভোটারের দল পরিবর্তন করে বিজেপিতে যোগদানকে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী, খেলাধুলার অবকাঠামো ও কর্মসংস্থান প্রকল্পের সফলতার কথা প্রচার করছেন তিনি।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ত্রিপুরার রাজনীতি এখন এক সঙ্কটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে বিজেপি উন্নয়নের প্রচারণা চালালেও, অন্যদিকে TIPRA Motha’র মতো আঞ্চলিক দলগুলো আদিবাসী স্বার্থ রক্ষার দাবিকে কেন্দ্র করে সমর্থন বাড়াচ্ছে। Tiprasa Accord যদি দ্রুত কার্যকর না হয়, তবে রাজ্যে জোট ভাঙন শুধু সরকারের স্থিতিশীলতাকেই হুমকির মুখে ফেলবে না, বরং আগামী নির্বাচনের সমীকরণও আমূল বদলে দিতে পারে।