ধারাবাহিক প্রতিবেদন: পবিত্র আহ্বানের পথে পর্ব-৬
মওলানা মোহাম্মদ কাউসার: হজের শেষ ধাপগুলো হলো তাওয়াফে ইফাযা ও বিদায়ী তাওয়াফ, যা হাজীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এই তাওয়াফগুলো আল্লাহর ঘর কাবা শরিফের চারদিকে শেষবারের মতো ঘুরে একরাশ কৃতজ্ঞতা, দোয়া ও বিদায়ের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম।
তাওয়াফে ইফাযা: হজ সম্পন্ন হওয়ার প্রতীক:
হজের মূল কাজসমূহ সম্পন্ন হওয়ার পর হাজীরা মক্কায় ফিরে এসে করেন তাওয়াফে ইফাযা বা হজ সম্পন্ন হওয়ার পর কাবায় শেষবারের ঘুরাফেরা। এটি মূলত একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং হাজীদের অন্তরকে চিহ্নিত করে—হজের কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের পর আল্লাহর নৈকট্য লাভের আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা।
সাতবার কাবার চারপাশে ঘুরে হাজীরা আল্লাহর সামনে দোয়া করেন, তাঁর প্রতি অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন এবং নিজেদের জীবনের নতুন পথচলার জন্য ইবাদতভরে প্রস্তুতি নেন।
বিদায়ী তাওয়াফ: ফিরে যাওয়ার বেদনার স্পর্শ
হজ শেষের দিন যখন হাজীরা তাওয়াফ করেন, তখন তাদের মনে ভাসে বিদায়ের বেদনা। দীর্ঘ সময়ের আত্মিক ও শারীরিক যাত্রার পর এই বিদায়ী মুহূর্তটি হয় এক মিশ্র অনুভূতির প্রকাশ।
কিছু হাজীর চোখে অশ্রু দেখা যায়, কারণ তাঁদের জন্য এই পবিত্র ভূমি থেকে বিদায় নেয়া কঠিন। অনেকের জন্য আবারও ফেরার সংকল্পও ঘুরে ফিরে আসে।
তাওয়াফের মধ্যে নিহিত শিক্ষা:
এই শেষ তাওয়াফ শুধু দেহের চলাফেরা নয়, বরং আত্মার প্রতিজ্ঞা—হজের অভিজ্ঞতাকে হৃদয়ে ধারণ করে জীবনে আল্লাহর সেবায় ফিরে যাওয়া। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তাওয়াফের পর জীবন হবে নবায়িত, আত্মা হবে পরিশুদ্ধ এবং মন হবে শান্ত।
একজন হাজীর জীবন এই তাওয়াফের মাধ্যমে শুরু হয় নতুন দিশায়। তিনি নিজেকে আল্লাহর পথে নিবেদিত করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন।
তাওয়াফে ইফাযা ও বিদায়ী তাওয়াফ হলো হজের যাত্রার অন্তিম অধ্যায়, যা একদিকে কৃতজ্ঞতার প্রকাশ, অন্যদিকে বিদায়ের বেদনাবোধ। এটি হাজীদের জন্য এক নতুন শুরু, যেখানে তারা দুনিয়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি নেন।
হজের এই শেষ ধাপ সম্পন্ন করে হাজীরা ফিরে যান নিজেদের দেশে, হৃদয়ে আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক নিয়ে।
পরবর্তী পর্ব: হজের পর জীবন: আত্মার পরিশুদ্ধি ও বাস্তব জীবনে প্রয়োগ