Home First Lead বিদেশে অর্থ পাচারের নতুন ইঙ্গিত? সুইস ব্যাংকে টাকা বাড়ছে হু হু করে

বিদেশে অর্থ পাচারের নতুন ইঙ্গিত? সুইস ব্যাংকে টাকা বাড়ছে হু হু করে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ২০২৪ সালে আকস্মিকভাবে ২৩ গুণ বেড়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বৃহস্পতিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা ছিল ৫৯৮ দশমিক ২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁক, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা।

এই অঙ্ক ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ২৩ গুণ বেশি। ২০২৩ সালের শেষে এ পরিমাণ ছিল মাত্র ২৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ফ্রাঁক (প্রায় ৩৯৬ কোটি টাকা)। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের শেষে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের জমা ছিল ৫৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ফ্রাঁক।

হঠাৎ এই প্রবৃদ্ধির কারণ কী?

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বৈশ্বিক মুদ্রা ও সম্পদ বাজারে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে উন্নয়নশীল দেশের অনেক ব্যক্তি ও সংস্থা নিরাপদ বিনিয়োগের খোঁজে সুইস ব্যাংকমুখী হয়েছেন। ২০২৪ সালে সুইস ফ্রাঁক ও সোনা দুটোই শক্তিশালী অবস্থানে ছিল, যার কারণে বিশ্বব্যাপী সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ থেকে এই অর্থের স্রোত সরাসরি অবৈধ নয়। কারণ, গত কয়েক বছর ধরে সুইস ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কড়াকড়ি আরোপ করেছে। তবে এর মধ্যেও অনিয়ম, কর ফাঁকি বা পুঁজি পাচারের বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি অর্থ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার এই প্রবণতা দেশীয় আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকজন ও প্রতিষ্ঠানের মোট জমা ছিল প্রায় ২.১ ট্রিলিয়ন সুইস ফ্রাঁক। এর মধ্যে বাংলাদেশি গ্রাহকদের অংশ যদিও খুবই ছোট, তবে বছরের ব্যবধানে এত বড় উত্থান নজরকাড়া।

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে জমা থাকা অর্থ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক—দুই দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্থের উৎস, বৈধতা, এবং ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে এখন আলোচনা দরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও উচিত এই প্রবণতা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণ করা।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের জমার বিবরণ (শেষ ৪ বছর):

বছর জমার পরিমাণ (সুইস ফ্রাঁকে) আনুমানিক টাকা (কোটি টাকা)
২০২১ ৮৭১ মিলিয়ন প্রায় ১৩,০৬৫ কোটি
২০২২ ৫৮.৪ মিলিয়ন প্রায় ৮৭৬ কোটি
২০২৩ ২৬.৪ মিলিয়ন প্রায় ৩৯৬ কোটি
২০২৪ ৫৯৮.২ মিলিয়ন প্রায় ৮,৯৭২ কোটি