Home কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের জনমন: মমতা না মোদি?

পশ্চিমবঙ্গের জনমন: মমতা না মোদি?

কৃষ্ণা বসু, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে আবারও রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যে একদিকে প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস, অন্যদিকে বিজেপিও মাঠে নামতে শুরু করেছে পূর্ণ শক্তিতে। রাজ্যে ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জনপ্রিয়তা এখনও শহর-গ্রামের বহু জায়গায় দৃশ্যমান হলেও ভেতরে ভেতরে একটা ক্ষোভও জমেছে, বিশেষ করে চাকরি দুর্নীতি, শিক্ষা দপ্তরে নিয়োগ কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে।

তৃণমূলের জনপ্রিয়তার ভিত্তি মূলত সামাজিক সহায়তা কর্মসূচি, যেমন লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী প্রভৃতি। এই সব প্রকল্প বিশেষ করে নারী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে বিরোধীরা বলছে, এসব ‘প্রণোদনার রাজনীতি’ মূল সমস্যাগুলো আড়াল করছে। কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন ও স্বচ্ছ প্রশাসনের দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে নাগরিক সমাজে।

গ্রাম ও শহরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

গ্রামাঞ্চলে মমতা ব্যানার্জির প্রতি আনুগত্য এখনও দৃঢ় থাকলেও, শহরাঞ্চলে উচ্চশিক্ষিত তরুণ সমাজের মধ্যে তৃণমূলের প্রতি অনাস্থা বাড়ছে। যুব সম্প্রদায়ের একাংশ বলছে, “চাকরি নেই, স্বচ্ছতা নেই, শুধু দলীয় অনুগতদেরই সুযোগ।”

অন্যদিকে বিজেপির প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাও গড়ে উঠছে না। ২০২১ সালে রাজ্যে বিজেপির উচ্চাভিলাষী প্রচার ব্যর্থ হওয়ার পর অনেকেই সন্দিহান—এই দল আদৌ বাংলা সংস্কৃতি ও বাস্তবতাকে বোঝে কিনা। তবে সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে কিছু আসনে বিজেপির ভালো ফল পাওয়া ও নতুন নেতৃত্বের উত্থান তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

দিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন

মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে রাজ্য সরকারের সঙ্গে মোদি সরকারের সম্পর্ক বরাবরই সংঘাতময়। রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ, কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থার অভিযান—এসব নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে। মমতা একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, “রাজ্যকে বঞ্চিত করে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে।”

তবে মজার বিষয় হলো, কিছু জাতীয় ইস্যুতে তৃণমূল ও বিজেপি একত্রে নরম সুরেও কথা বলেছে, যেমন—সমাজের স্থিতিশীলতা বা জাতীয় নিরাপত্তা-র বিষয়গুলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি কৌশলগত অবস্থান, যাতে কেন্দ্রের অতিরিক্ত চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়।

ভোটের আগে অনিশ্চয়তা

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এখনো সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হলেও ভেতরে ভেতরে নানা অসন্তোষ কাজ করছে। বিজেপি চায় সেই ফাঁকেই ঢুকে ভোটের ভারসাম্য বদলাতে। তবে বিজেপির সংগঠন এখনও অনেক জায়গায় দুর্বল। আর বাম-কংগ্রেস জোট এখনো স্পষ্ট নেতৃত্ব ও কর্মপরিকল্পনার অভাবে নিষ্ক্রিয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাজ্যজুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—২০২৬ সালে কি আবারও মমতার ‘হ্যাটট্রিক’ হবে, নাকি বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ কোনো নতুন সমীকরণ গড়ে তুলবে?