বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: উৎসবের মৌসুম কিংবা জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণের পরিকল্পনা করলেই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিমানের টিকিটের চড়া দাম। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্রমণপিপাসু ও নিয়মিত যাত্রীরা যদি সঠিক সময়ে পরিকল্পনা করে টিকিট বুক করেন, তাহলে আকাশপথে ভ্রমণ অনেকটাই সাশ্রয়ী হতে পারে। টিকিটের দাম কখন কম থাকে এবং কিভাবে সেরা ডিল পাওয়া সম্ভব, তা নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিমানের টিকিটের দাম মূলত চাহিদা ও যোগানের ওপর নির্ভর করে। ভ্রমণের তারিখ ও সময় যতটাই নমনীয় হবে, যাত্রী ততটাই কম খরচে টিকিট কিনতে পারবেন।
সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে, বিশেষ করে মঙ্গলবার ও বুধবার টিকিটের দাম তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া যায়। বিপরীতে ছুটির দিন বা সপ্তাহান্তে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় দামও বেড়ে যায়। দিনের প্রথম দিকের ফ্লাইট, বিশেষ করে ভোরবেলার টিকিটও সাধারণত কম মূল্যে পাওয়া সম্ভব।
আগেভাগে টিকিট বুক করার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে যাত্রার অন্তত ১৫ থেকে ৩০ দিন আগে টিকিট কিনলে খরচ কম হয়। আন্তর্জাতিক রুটে সাশ্রয়ের জন্য তিন থেকে ছয় মাস আগে বুকিং করা সবচেয়ে কার্যকর। গুগল ফ্লাইটসের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যাত্রার প্রায় দুই মাস আগে টিকিট কাটলে গড়ে সর্বনিম্ন ভাড়া পাওয়া যায়। বিপরীতে যাত্রার তারিখ যত ঘনিয়ে আসে, টিকিটের দামও ততটা বাড়তে থাকে।
ছুটির মৌসুম বা বিশেষ উপলক্ষে টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে। যেমন বছরের শেষ দিকে বা ঈদ, পূজা কিংবা বড়দিনের সময় ভ্রমণের খরচ বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতি এড়াতে অনেকে মৌসুম শুরুর আগে বা পরে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। যেমন রমজান মাসে দুবাই ভ্রমণ করলে টিকিট ও হোটেল বুকিং দুটোই তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়।
এয়ারলাইনসের নিজস্ব ওয়েবসাইট ছাড়াও স্কাইস্ক্যানার, কায়াক, শেয়ারট্রিপ বা গোযায়ানের মতো প্ল্যাটফর্মে দাম তুলনা করলে ভালো ডিল পাওয়া যায়। এছাড়া টিকিট সার্চের সময় ব্রাউজারের ইনকগনিটো মোড ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা, যাতে সার্চ হিস্টোরির ওপর ভিত্তি করে কৃত্রিমভাবে টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেওয়া না যায়।
বিভিন্ন এয়ারলাইনস বছরজুড়ে ছাড় ও অফার দিয়ে থাকে। তাই নিয়মিত ওয়েবসাইট চেক করা কিংবা পর্যটন মেলায় টিকিট কেনাও সাশ্রয়ের উপায় হতে পারে।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, এয়ার টিকিটের গায়ে এজেন্সির নাম, লাইসেন্স নম্বর ও বিক্রয়মূল্য উল্লেখ বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি কোনো ট্রাভেল এজেন্সি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
অতএব, কিছু পরিকল্পনা ও গবেষণার মাধ্যমে বিমানের চড়া ভাড়া থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ভ্রমণকারীদের উচিত আগে থেকে পরিকল্পনা করা, সঠিক সময়ে টিকিট বুক করা এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে দাম তুলনা করে সেরা অফার খুঁজে নেওয়া। এতে আকাশপথের ভ্রমণ অনেকটাই স্বস্তিদায়ক ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠতে পারে।