১০ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদণ্ড
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রিতে কারসাজি, দুর্বৃত্তায়ন ও প্রতারণা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এখন থেকে টিকিটসংক্রান্ত যেকোনো প্রতারণা বা হয়রানির ঘটনায় সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১১টি অপরাধের ক্ষেত্রে ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করা যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘বেসামরিক বিমান চলাচল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এবং ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশে অবৈধ টিকিট বিক্রয়, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অননুমোদিত লেনদেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, তৃতীয় দেশ থেকে টিকিট ক্রয়-বিক্রয়, গ্রুপ বুকিংয়ের পর যাত্রীর তথ্য পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অনিয়মকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়া, এখন থেকে সব ট্রাভেল এজেন্সিকে টিকিটের গায়ে মূল্য উল্লেখ করতে হবে। টিকিটে মূল্য না লিখলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বিমান পরিবহন খাতের ৮০ শতাংশ যাত্রীই অভিবাসী কর্মী। এই দুটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে তাদের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষিত হবে এবং যাত্রীসেবা আরও আধুনিক ও জনবান্ধব হবে।
নতুন আইনে সরকারকে কোনো ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সাময়িকভাবে স্থগিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতারণা বা অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর সাময়িক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধানও যুক্ত করা হয়েছে।
আইনে প্রথমবারের মতো ‘যাত্রী সেবা নিশ্চিতকরণ’ শব্দগুচ্ছ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। টিকিট বিতরণে স্বচ্ছতা আনতে গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) ও এপিআই-ভিত্তিক ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সংশোধনীতে আরও যুক্ত হয়েছে—এয়ার অপারেটরদের জন্য ট্যারিফ দাখিল ও মনিটরিংয়ের বিধান, পরিবেশবান্ধব বিমান চলাচলে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও টেকসই জ্বালানি ব্যবহারের শর্ত, ‘বেসামরিক বিমান চলাচল অর্থনৈতিক কমিশন’ গঠনের ক্ষমতা, এবং সাইবার সুরক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার।
উপদেষ্টা বলেন, “গত ১৬ বছর ধরে বিমান খাতে দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল। আইনি দুর্বলতার কারণে অভিবাসী শ্রমিকরা এর প্রধান শিকার হয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের টিকিট ৩০ বা ৪০ হাজার টাকার হলেও অনেক সময় ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন আইনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক দরে টিকিট বিক্রয় নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে যাত্রীদের অধিকার ও সেবা সুরক্ষিত থাকবে।”
বশিরউদ্দীন জানান, নতুন আইনের ফলে একটি এজেন্সির টিকিট আরেকটি এজেন্সি বিক্রি করতে পারবে না। এতদিন এভাবে আড়তদারি ব্যবসার মতো টিকিট বেচাকেনা চলায় নৈরাজ্য তৈরি হয়েছিল।
তিনি জানান, গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩২ লাখ মানুষ বিদেশে গেছেন। তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে, যা প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বিএমইটি-সার্টিফায়েড শ্রমিকদের নামে গ্রুপ টিকিট বুকিং দেওয়া যাবে না, তবে পরিবার বা সংগঠনের সদস্যদের ক্ষেত্রে তা অনুমোদিত হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এয়ারলাইনসের সব কার্যক্রম এখন অটোমেটিক সিস্টেমে হয়। ফলে কে, কোথা থেকে টিকিট বিক্রি করছে তা সফটওয়্যারে ধরা পড়বে। কোনো এয়ারলাইনস নিয়মবহির্ভূতভাবে টিকিট বিক্রি করলে তাদের দায় নিতে হবে।”
তিনি জানান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত একযোগে এই খাতে তদারকি চালাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান, অতিরিক্ত সচিব ফারহিম ভীমা ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।










