বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট:বিশ্বের দুই প্রধান চা উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও তুরস্কে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উৎপাদনে মারাত্মক হ্রাস দেখা দিয়েছে। এই সংকট ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ সংকুচিত করে চায়ের দাম বাড়িয়েছে। জলবায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট তাপপ্রবাহ, খরা ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত চা বাগানের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বিশ্ববাজারে চায়ের সরবরাহ ও দাম দুটোতেই বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হবে।
ভারতের আসাম ও দার্জিলিং অঞ্চলে গত বছর থেকে শুরু হওয়া খরার প্রভাবে চা উৎপাদন গত ২০২৪ সালে ৭.৮ শতাংশ কমে ১২৮৫ মিলিয়ন কেজিতে নেমে এসেছে। বিশেষ করে জুন মাসে আসামের বারাক উপত্যকায় অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর চা বাগান পানিতে তলিয়ে গেছে। দার্জিলিংয়ে উৎপাদন ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ফলস্বরূপ, কাঁচা চায়ের বাজারে দাম বেড়ে প্রায় ২০ শতাংশ উঠেছে।
তুরস্কেও একই অবস্থা। ২০১৯ সালে যেখানে দেশটির চা উৎপাদন ছিল ১.৪৫ মিলিয়ন টন, সেখানে ২০২৩ সালে তা কমে হয়েছে মাত্র ৫০০ হাজার টনের নিচে। গ্রীষ্মকালে দীর্ঘদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ায় ও বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তার কারণে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে চা গাছ শুষ্ক হয়ে পড়ছে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (FAO) জানাচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী চা চাষযোগ্য জমির অর্ধেকের বেশি হুমকির মুখে পড়বে। এর মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, তুরস্ক, নেপাল ও চীনের কিছু অঞ্চল বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই সংকটের মধ্যেও গ্লোবাল চায়ের চাহিদা কমেনি; বরং বাড়ছে। ২০২৪ সালে বিশ্ব চা বাজারের মূল্য ছিল প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সাল নাগাদ ৫৯ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশিত। তবে উৎপাদনে সমস্যা এবং দাম বাড়ার ফলে বাজারে স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
বিশেষ করে প্রিমিয়াম ও স্পেশালিটি চায়ের চাহিদা বেড়ে গেছে, যার ফলে দাম আরও বাড়ছে। জাপানে ম্যাচা চায়ের দাম সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আমদানির খরচ বাড়ায় খুচরা দামের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট মোকাবিলায় উৎপাদনশীল দেশগুলোকে দ্রুত ড্রাউট-সহিষ্ণু চারা রোপণ, আধুনিক সেচ ব্যবস্থা ও বন সংরক্ষণে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ভারত ও তুরস্কের কৃষকরা ইতোমধ্যে এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তবে সরকারি সহায়তা না গেলে বড় ধরনের সংকট এড়ানো কঠিন।
বাংলাদেশও এই ঝুঁকির বাইরে নয়। দেশের চা বাগানগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে। তাই এখনই পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে টেকসই চা উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে।