বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কুমিল্লা: বিয়ের দিন বরযাত্রায় রওনা হয়েছিলেন কুমিল্লার অমিত কুমার সরকার। রাত পোহানোর আগেই হৃদরোগে মৃত্যু। পরিবারে এখন শুধুই কান্না আর শোক।
বিয়ের সাজে সুসজ্জিত গাড়িবহর নিয়ে কনের বাড়ির পথে রওনা হয়েছিলেন বর অমিত কুমার সরকার। চারদিকে আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উৎসব। মা-বাবার চোখে ছিল নতুন জীবনের স্বপ্ন। কিন্তু রাত পোহাতে না পোহাতেই সেই স্বপ্ন পরিণত হয় এক চরম দুঃস্বপ্নে। কনে নয়, বর নিজেই ফিরে এলেন অ্যাম্বুলেন্সে, নিথর দেহ নিয়ে।
৩৫ বছর বয়সী অমিত কুমার সরকার কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন তিনি। মাত্র তিন বছর আগে ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে মারা যান ছোট ভাই আশিক সরকার। সেই শোককে সঙ্গী করেই বাবা দিলীপ সরকার ও মা রাধা রাণী সরকার আশার আলোকরেখা খুঁজেছিলেন বড় ছেলে অমিতকে ঘিরে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভিংরাব গ্রামে বিয়ে ঠিক হয় তিন মাস আগে। ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার ছিল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। গায়ে হলুদের আনন্দ শেষে বরযাত্রী নিয়ে রওনা দেন অমিত। তবে রাত ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকায় পৌঁছে হঠাৎ বুকের তীব্র ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন তিনি।
প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত নেওয়া হয় ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে রাত ২টার দিকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান অমিত।
ওদিকে, রূপগঞ্জের বিয়েবাড়িতে চলছিল সাজসজ্জা আর উচ্ছ্বাস। বর কখন আসবেন—এই প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছিলেন কনে ও তার পরিবার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বর এসে পৌঁছায় না। পরে ফোনে জানানো হয়—বর আর আসবেন না, তিনি নেই।
শুক্রবার ভোরে গ্রামে ফেরে প্রাইভেটকারে নয়, বরফ ঠান্ডা অ্যাম্বুলেন্সে করে অমিতের নিথর দেহ। বরের পোশাকেই মোড়ানো ছিল তার শরীর। সাদাকাপড়ে জড়ানো দেহের কপালে তখনও ছিল চন্দনের ফোঁটা।
আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে কান্নায়। মা রাধা রাণী সরকার একবারেই ভেঙে পড়েছেন। চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমার দুই ছেলেই চলে গেল… আমি আর কারে ধরে বাঁচবো?’—এই আর্তনাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে পুরো গ্রাম।
পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা জানান, মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে দুই ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না বাবা-মা। অমিতের মৃত্যু সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, অসংখ্য মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেন।
বরযাত্রী দলের একজন গুরুপদ সরকার বলেন, “আমরা সামনে গাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ অমিতের গাড়ি থেকে ফোন আসে—সে অসুস্থ। দ্রুত ফিরে যেতে বললেন। এরপর আর বিয়েবাড়ি পর্যন্ত যাওয়া হয়নি।”
এ যেন আনন্দযাত্রার শেষে এক অনন্ত বিষাদের গল্প।